দায় এড়াতে পারে না কর্তৃপক্ষ-ভবনমালিক
একটি ভবনের নকশা করা হয় তার ব্যবহারের ওপর ভিত্তি করে। ঢাকা শহরে রেস্তোরাঁর যে ছড়াছড়ি দেখা যাচ্ছে, সেই সব ভবনের সিংহ ভাগের ব্যবহার ছাড়পত্র বা অকুপেন্সি সার্টিফিকেট দেওয়া আছে বাণিজ্যিক ভবন হিসেবে, সমাবেশ ভবন হিসেবে নয়। ইমারত নির্মাণ বিধিমালায় ব্যবহারভেদে প্রতিটি ভবনের জন্য আলাদা নিয়মকানুন বিশদভাবে বর্ণনা করা আছে। কারণ সমাবেশ ভবন হলে যে সেটব্যাক, অগ্নিনিরাপত্তার যে বিধিবিধান প্রয়োগ করা প্রয়োজন, তা অবশ্যই বাণিজ্যিক ভবন থেকে আলাদা। এ ছাড়া বিএনবিসিতেও উল্লেখ করা আছে সুস্পষ্ট নিয়মনীতি ও কোড। তাহলে বারবার কেন এমন দুর্ঘটনা ঘটছে?
একটা ভবনে যখন অনেকগুলো খাবারের দোকান একসঙ্গে থাকে, প্রতিটি দোকানের জন্য আলাদা রান্নাঘর তো থাকছেই। নিঃসন্দেহে বাণিজ্যিক ভবনগুলো রেস্তোরাঁর এই রান্নাঘরের বিষয়টি মাথায় রেখে নকশা করা হচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ ও ভবনমালিক তাঁদের দায় এড়িয়ে যেতে তো পারেনই না, উপরন্তু তাঁরা প্রত্যক্ষভাবে এই মৃত্যুর মিছিলের জন্য দায়ী।
বেইলি রোডের ভবনটি জুড়ে ছিল রেস্তোরাঁ, কাপড় আর ইলেকট্রনিক সামগ্রীর দোকান। আর ভবন থেকে নিচে নামার সিঁড়ির মুখে সারিবদ্ধভাবে রাখা ছিল গ্যাসের সিলিন্ডার। আগুন ছড়িয়ে পড়তে এর চেয়ে বেশি কিছু কি প্রয়োজন হয়? ভবনটিতে ছিল কেএফসি, কাচ্চি ভাই, পিৎজা ইন-এর মতো জনপ্রিয় সব খাবারের দোকান। ছিল গ্যাজেট অ্যান্ড গিয়ারের মতো বহুল প্রচলিত গ্যাজেট শপ আর ইলিয়েনের মতো কাপড়ের দোকান। স্বাভাবিকভাবেই সেই ভবনে জনসমাগম হতো প্রচুর।
আগুন ভবনের নিচের দিকে আগে লেগেছিল এবং আগুনের স্বাভাবিক ধর্ম অনুযায়ী তা ওপরের দিকে দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে। সাততলা ভবনটিতে জরুরি নির্গমন পথ বলতে ছিল একটিমাত্র সিঁড়ি এবং এর মুখে ছিল ৩৫ কেজি ওজনের একেকটা গ্যাস সিলিন্ডারের সারি।ইমারত নির্মাণ বিধিমালা অনুযায়ী, ভবন বাণিজ্যিক বা আবাসিক যা-ই হোক না কেন, সেখানে জরুরি নির্গমনের জন্য ফায়ার স্টেয়ার আবশ্যক, যা ভবনটিতে অনুপস্থিত ছিল।
এখন অনেক কিছুই তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে আসবে, কিন্তু ঝরে গেল প্রায় অর্ধশত তাজা প্রাণ। যাঁদের প্রায় সবারই শ্বাসনালি পুড়ে গিয়েছিল; অর্থাৎ আগুন লাগার পর তাঁরা নিচেও নামতে পারেননি, ওপরেও উঠতে পারেননি, ধোঁয়ায় দম আটকে মারা গেছেন। এর চেয়ে করুণ মৃত্যু কী হতে পারে? প্রতিটি পলে আপনি বুঝতে পারছেন যে মৃত্যু আপনাকে গ্রাস করছে?