মিউনিখের আলোচনা বিশ্ব নিরাপত্তা কতটা নিশ্চিত করবে?

যুগান্তর ড. দেলোয়ার হোসেন প্রকাশিত: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১১:৩৬

মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনের রয়েছে দীর্ঘ ষাট বছরের ইতিহাস। ১৯৬৩ সালে পশ্চিমা বিশ্বের দেশগুলো থেকে মূলত অংশগ্রহণ করা হতো এবং এ সম্মেলনের মাধ্যমে পশ্চিমা বিশ্বের যেসব হুমকি এবং নিরাপত্তা সংকট ছিল, সেগুলো নিয়ে আলোচনার উদ্দেশ্যেই মূলত মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনের যাত্রা শুরু। প্রতিষ্ঠার সময়টিই বলে দিচ্ছে, স্নায়ুযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে এ সম্মেলনের উৎপত্তি এবং বরাবরই সম্মেলনটি একটি অনানুষ্ঠানিক প্লাটফর্ম, যার মাধ্যমে ইউরোপের নিরাপত্তার বিষয়গুলো তখনকার পরিপ্রেক্ষিতে আলোচিত হয়েছে। এ সম্মেলনের একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, এখানে বিভিন্ন দেশের সরকারপ্রধান, রাজনীতিক, কূটনীতিক একত্র হন এবং একটি অনানুষ্ঠানিক পরিবেশে এ বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়। প্রথম কয়েক দশক আলোচনা মূলত স্নায়ুযুদ্ধের প্রভাবের মধ্যেই সীমিত ছিল এবং সেখানে একদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যদিকে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যকার দ্বন্দ্ব, প্রতিযোগিতা ও প্রতিদ্বন্দ্বিতা মুখ্য বিষয় ছিল এবং তাকে কেন্দ্র করে ইউরোপের উদ্বেগ এবং শঙ্কা ছিল। আমরা জানি, ইউরোপ তখন পশ্চিম ইউরোপ এবং পূর্ব ইউরোপে বিভক্ত ছিল। পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ অবস্থানে ছিল এবং এখনো যা বজায় আছে। এ সম্মেলন ইউরোপভিত্তিক একটি প্লাটফর্ম, যেটি ইউরোপের নিরাপত্তা এবং চ্যালেঞ্জগুলো বিশ্লেষণের সুযোগ তৈরি করে। সেখান থেকে বিভিন্ন বিষয় আলোচনার পর পশ্চিমা বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রগুলো তাদের পররাষ্ট্রনীতিতে বাস্তবায়নের চেষ্টা করে।


নিরাপত্তা সম্মেলনের বিষয়টি স্নায়ুযুদ্ধের পরে ধীরে ধীরে তার একটি ব্যাপ্তি লাভ করে এবং স্নায়ুযুদ্ধের পর থেকে যত বেশি সময় অতিক্রান্ত হয়েছে, এ মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলন তত বেশি বৈশ্বিক রূপ ধারণ করেছে। মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে একসময় রাশিয়া একটি সক্রিয় ও শক্তিশালী অংশগ্রহণকারী ছিল। দীর্ঘ সময় ধরে মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনের মূল উপজীব্য ছিল ইউরোপের বাইরের যে বিশ্ব, অর্থাৎ আফগানিস্তান, ইরাক কিংবা মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা এবং একই সঙ্গে স্নায়ুযুদ্ধের পর রাশিয়ার সঙ্গে পশ্চিমা বিশ্বের যে সুসম্পর্ক তৈরি হয়েছিল, সেটিকে আরও বেশি শক্তিশালী করা। তার সূত্র ধরে সেই সম্পর্ককে কীভাবে আরও শক্তিশালী করা যায় সেই চেষ্টা করা। আমরা জানি, রাশিয়া ইউরোপের সঙ্গে ক্রমাগত আরও বেশি যুক্ত হয়েছে, রাশিয়াকে জি-সেভেনের সঙ্গে যুক্ত করে জি-৮ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। রাশিয়ার বর্তমান প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন নিয়মিত এ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেছেন এবং এ সম্মেলনেই রাশিয়ার সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ স্টার্ট চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তিটি স্বাক্ষর করেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তখনকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিন্টন এবং রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ। পুতিন বরাবরই এ নিরাপত্তা সম্মেলনে বক্তব্য দিয়েছেন। এ বক্তব্যের মাধ্যমেই আমরা দেখতে পাই, ইউরোপকেন্দ্রিক এ নিরাপত্তা সম্মেলনটি মূলত আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার বিষয়গুলো নিয়ে ব্যস্ততা ছিল।


কিন্তু গত দুই বছর অর্থাৎ ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে নিরাপত্তা সম্মেলনের পরিপ্রেক্ষিত, আলোচ্য বিষয় এবং নিরাপত্তা সম্মেলনের ভবিষ্যৎ করণীয় সবকিছুই পালটে যায়। ফলে বর্তমান বিশ্বের একটি জটিল সময়ে এ নিরাপত্তা সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং এটি অতীতের চেয়ে অনেক বড় পরিসর ধারণ করেছে। এ সম্মেলনটি একসময় পশ্চিমা দেশগুলোকে কেন্দ্র করে হলেও এখন আমরা দেখতে পাচ্ছি বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিভিন্ন দেশ সেখানে অংশগ্রহণ করছে। পুতিন একসময় নিয়মিত এ সম্মেলনে অংশগ্রহণ করলেও এখন সম্পূর্ণ বিপরীত মেরুতে তার অবস্থান। সেদিক থেকে মিউনিখ সম্মেলনে যে বিষয়গুলো গুরুত্ব পাচ্ছে, সেটি মূলত ইউক্রেন যুদ্ধ এবং ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে রাশিয়ার যে হুমকি, সেই হুমকির বিষয়টি। বিশ্ব নিরাপত্তা বা আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার ধারণার ক্ষেত্রে বড় ধরনের পরিবর্তন এসেছে। একসময় রাশিয়াকে নিরাপত্তার জন্য হুমকি মনে করা হতো না, কিন্তু এখন রাশিয়া অন্যতম হুমকি। ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে ইউরোপের ভেতরে একদিকে যেমন রাশিয়াবিরোধী অবস্থান তৈরি হয়েছে, একই সঙ্গে এ যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার ফলে ইউরোপের ভেতরেও মতপার্থক্য দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে ন্যাটোর ভেতরে যে ঐক্য ছিল, সেটিও বড় ঝুঁকির মধ্যে আছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বের বিষয়টিও চাপে আছে। ফলে ইউক্রেনকে সমর্থন করে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া অর্থনৈতিকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ কাজ। অস্ত্র এবং অর্থ দুটোই ইউক্রেনকে ব্যাপকভাবে দিতে হচ্ছে এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখানে একটি বড় ভূমিকা পালন করছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সেটি পালন করলেও সার্বিকভাবে পশ্চিমা বিশ্বেরই বড় ধরনের সহযোগিতার মাধ্যমেই ইউক্রেন যুদ্ধকে একটি সমান অবস্থানে রাখা হয়েছে। তা না হলে রাশিয়ার আক্রমণের প্রেক্ষাপটে ইউক্রেন হয়তো অনেক আগেই পরাজিত হয়ে পড়ত।


ইউক্রেন যুদ্ধের পাশাপাশি গাজা যুদ্ধ চলছে, যেখানে ইসরাইল মানবতার চরম সংকট তৈরি করেছে। কেউ কখনো কল্পনাও করতে পারিনি; এ যুদ্ধ এতটা ভয়ংকর রূপ ধারণ করবে। এ পর্যন্ত ২৯ হাজারেরও বেশি নিরীহ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করা হয়েছে। একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলে প্রায় খাঁচাবন্দি করে নিরীহ মানুষগুলোকে হত্যা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক আদালত ইসরাইলের বিরুদ্ধে গণহত্যার রায় দিলেও ইসরাইল তাতে কর্ণপাত করেনি বরং রাফাতে নতুনভাবে আক্রমণ করছে। ইসরাইলের এ আক্রমণের সূত্র ধরে মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা সংকট তৈরি হয়েছে এবং পুরো মধ্যপ্রাচ্যই এখন উত্তপ্ত। লোহিত সাগর অঞ্চলে চলাচলকারী জাহাজের ওপর আক্রমণ হচ্ছে। হুথিদের সক্রিয়তা যেমন দেখা যাচ্ছে, তা দমন করার জন্য আক্রমণও হচ্ছে। ইয়েমেন সংকট আরও ঘনীভূত হচ্ছে। ফলে এরকম একটি অবস্থায় মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনের গুরুত্ব ব্যাপক। বর্তমান বিশ্ব বাস্তবতায় যেমন অর্থনৈতিক সংকট রয়েছে, তেমনি রয়েছে নিরাপত্তা সংকট। বিশ্বব্যাপী নতুন করে সংকট তৈরি হয়েছে। যেমন পূর্ব এশিয়া থেকে শুরু করে পূর্ব ইউরোপ কিংবা রাশিয়া অঞ্চলে। এর ফলে অর্থনীতি বিপর্যস্ত হচ্ছে, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মধ্যে সম্পর্কের পরিবর্তন ঘটছে, মেরুকরণের প্রভাব তৈরি হচ্ছে। ফলে এ মেরুকরণ ও নিরাপত্তার সংকট থেকে বিশ্বকে কীভাবে একটি শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতির দিকে, শান্তিপূর্ণ ব্যবস্থার দিকে এগিয়ে নেওয়া যায়, সেটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও