ভুল হয় আর দেরি হয়ে যায়
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী বলেছেন, মার্চ থেকেই পণ্যবাজারে সরকারের নেওয়া পদক্ষেপের সুফল দৃশ্যমান হবে। তিনি বলতে চাইছেন, রমজানে এবার ভিন্ন অভিজ্ঞতা হবে মানুষের। এমসিসিআইর অনুষ্ঠানে তিনি ব্যবসায়ীদেরও বলেছেন ওই মাসটিকে ‘সুযোগ হিসেবে’ না নিতে। সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রীও এসব বলে ব্যবসায়ীদের উদ্বুদ্ধ করতে চাইতেন। তাতে কাজ হয়নি। রমজানে যথারীতি প্রতিকূল পরিস্থিতিই মোকাবিলা করতে হয়েছে ভোক্তাদের। এবার একটু কম প্রতিকূলতা মোকাবিলা করতে হলেই তারা খুশি হয়ে যাবে! কিন্তু সেটার লক্ষণও কি রয়েছে?
নতুন মেয়াদে দায়িত্ব নিতে না নিতেই চালের বাজারের আচরণ সরকারকে বিব্রত করেছিল। আমনের ভরা মৌসুমে কেন এ দাম বৃদ্ধি– সে প্রশ্ন করতে দেখা গিয়েছিল খোদ প্রধানমন্ত্রীকে। উৎপাদন ঘাটতির প্রশ্নও তখন তুলেছিলেন অনেকে। এর কিছুদিন যেতে না যেতেই দেখা গেল, সরকার কিছু চাল আমদানিতে উদ্যোগী। এটা সহজ করতে কর-শুল্কে বড় ছাড় দেওয়ার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে সম্প্রতি। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে কিন্তু এ উদ্যোগ ছিল না। তারা শুধু চিনি, ভোজ্যতেল ও খেজুরে শুল্ক ছাড়ের প্রয়োজনীয়তা ব্যক্ত করেছিল। এ তালিকায় চাল যুক্ত হয়েছে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে। প্রধান খাদ্যপণ্যের বেলায় এমন সতর্কতা থাকাই উচিত। খাদ্য নিরাপত্তার সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত অন্যান্য পণ্যের চাহিদা, উৎপাদন আর সরবরাহ পরিস্থিতিও নীতিনির্ধারকদের কাছে স্বচ্ছ থাকা জরুরি। নইলে সিদ্ধান্ত গ্রহণে ঘটতে পারে মর্মান্তিক ভুল।
চালের দাম উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ার পর সম্প্রতি কিছুটা কমে এলেও তা আগের জায়গায় আসেনি। এটিই সাধারণত ঘটতে দেখা যায়। তখন আমরা বলি, দাম ‘উচ্চমূল্যে স্থিতিশীল’। তবে দাম বাড়লেও সমস্যা হয় না তাদের, যারা আরও বেশি হারে আয় বাড়াতে পারে। তবে দেশের সিংহভাগ মানুষের জন্য চাল, এমনকি আলুর দাম গুরুত্বপূর্ণ। ডাল, ভোজ্যতেল, লবণের দাম তাদের জীবনে জরুরি। ‘চাল-ডাল-তেলের দাম কমাতে হবে’ বলে স্লোগান একসময় খুব দেওয়া হতো। এখনও এর প্রয়োজন একেবারে ফুরিয়ে যায়নি।
এর মধ্যে কেবল আলুর বাজারেই কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে; সেটাও মানুষকে যথেষ্ট ভুগিয়ে। আলু ও চালের দাম মাঝে সমান হয়ে গিয়েছিল। নতুন আলু ওঠার পরও দাম দ্রুত কমেনি। এর আগেই অবশ্য আলু আমদানির সিদ্ধান্ত নিতে হয় সরকারকে। সে ক্ষেত্রে আমরা দেখেছিলাম আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয়হীনতাও। আমদানির বিরোধিতা করে কৃষি মন্ত্রণালয়; তারা স্বীকার করতে চাইছিল না– আলুর উৎপাদন কম হয়েছে। এই করতে করতে আমদানির সিদ্ধান্ত যখন নেওয়া হলো, তখন এসে গেল দেশে আগাম আলু উত্তোলনের সময়। তখন প্রশ্ন তুললেন কেউ কেউ– আমদানির চাপে আলুর উৎপাদকরা তো ভালো দাম পাবেন না। তবে এসবের পরও আলুর দাম দ্রুত কমে আসতে দেখিনি। প্রশ্ন হলো, কৃষক এ উচ্চ দামের হিস্যা কতটা পেয়েছে?