আধাআধি ডিজিটাল পথে স্মার্ট যাত্রা
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ ২০২১ সালের মধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার রূপকল্প ঘোষণা করেছিল। উদ্দেশ্য ছিল প্রযুক্তি ব্যবহার, দেশের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সেবা, কর্মসংস্থান এবং দারিদ্র্য মোচনের ব্যবস্থা করা। টানা ক্ষমতায় থেকে ১৫ বছরে ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনে অনেক কাজ হয়েছে। সরকারি সেবা কম্পিউটারভিত্তিক হয়েছে, আর্থিক লেনদেন এখন খুবই সহজ, ইন্টারনেট ব্যবহার ব্যাপক হারে বেড়েছে। সার্বিকভাবে মানুষের জীবনযাত্রাও আগের চেয়ে সহজ ও প্রযুক্তিনির্ভর হয়েছে। সরকার এখন স্মার্ট বাংলাদেশ নামে নতুন একটি রূপকল্পের কথা সামনে এনেছে। যদিও ডিজিটাল বাংলাদেশ বলতে সরকার যেসব সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যের কথা বলেছিল, তা অনেকাংশই পূরণ হয়নি। বলা যায় ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনের প্রক্রিয়ায় সবকিছু টাচ করা গেছে। যাকে বলে আধা ডিজিটাল হয়েছে বাংলাদেশ। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে ডিজিটাল বাংলাদেশ অর্জনে শতভাগ সফলতা দাবি করা হয়। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। ডিজিটালাইজেশনের জন্য অন্যতম প্রধান উপাদান ইন্টারনেট। আমাদের দেশের ইন্টারনেট-প্রাপ্তি, খরচ এবং উপযোগিতার অবস্থা খুবই নাজুক। দুর্নীতি কমানো, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির ক্ষেত্রেও অগ্রগতি কম।
ডিজিটাল সেবার ক্ষেত্রে প্রতিবেশী ও সমপর্যায়ের অনেক দেশের চেয়ে বাংলাদেশ এখনো পিছিয়ে। যেমন ইন্টারনেটের গতি বাংলাদেশে কম। বিশ্বের ১৪৩ দেশের মধ্যে মোবাইল ইন্টারনেটের গতিতে বাংলাদেশের অবস্থান ১২০তম। আর ফিক্সড ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের গতিতে ১৮২ দেশ ও অঞ্চলের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১০৬তম। কোনো দেশে মোবাইল ও ফিক্সড ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের গতি নির্ধারণে ‘স্পিডটেস্ট গ্লোবাল ইনডেক্স’ নামের যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠান গত ৩০ আগস্ট প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ তথ্য জানায়।
মোবাইল নেটওয়ার্কের মান, কার্যক্ষমতা, ব্যবহারযোগ্যতা নির্ণয় ও বিশ্লেষণের জন্য বিশ্বব্যাপী পরিচিত প্রতিষ্ঠানটির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গত বছরের জুলাইয়ে মোবাইল ইন্টারনেটে বাংলাদেশের গড় ডাউনলোড স্পিড ছিল প্রতি সেকেন্ডে ১৭ দশমিক ১৮ মেগাবিটস (এমবিপিএস)। গড় আপলোড স্পিড ছিল ৮ দশমিক ৯৯ এমবিপিএস। পাশাপাশি একই মাসে ফিক্সড ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটে গড় ডাউনলোড স্পিড ছিল ৩৭ দশমিক ৯২ এমবিপিএস আর আপলোড স্পিড ছিল ৩৯ দশমিক ২১ এমবিপিএস।
ডিজিটাল সেবা নিতে যে স্মার্টফোন দরকার, সেই স্মার্টফোন ব্যবহারের হার প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশে অনেক কম। যদিও গত বছরের জুলাই মাসে সরকারের এক মন্ত্রী জানিয়েছিলেন দেশের ৬৩ দশমিক ৩ শতাংশ মানুষ স্মার্ট ফোন ব্যবহার করে। ইন্টারনেট ব্যবহার করে ৪৩ দশমিক ৬ শতাংশ মানুষ। আর মোবাইল ফোন ব্যবহার করে দেশের মোট জনগোষ্ঠীর ৯৭ দশমিক ৯ শতাংশ মানুষ। তবে গ্লোবাল ডেটা রেফারেন্স লাইব্রেরি-ডেটা রিপোর্টালের ২০২৩ সালের গ্লোবাল ডিজিটাল ওভারভিউ রিপোর্টে, বাংলাদেশে প্রায় সাড়ে ১০ কোটির বেশি মানুষ ইন্টারনেট সুবিধার বাইরে রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ২০২৩ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশে ১০ কোটি ৫১ লাখ ৩৮ হাজার মানুষ (মোট জনসংখ্যার প্রায় ৬১.১ শতাংশ) ইন্টারনেট সুবিধার বাইরে রয়েছে এবং বিশ্বব্যাপী ইন্টারনেট সংযোগহীন জনসংখ্যার দিক থেকে চতুর্থ বৃহৎ জনগোষ্ঠী রয়েছে বাংলাদেশে। বাংলাদেশিরা ইন্টারনেট ব্যবহারে বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় প্রায় ৬ দশমিক ৯ গুণ বেশি অর্থ খরচ করছে। ডিজিটালের ক্ষেত্রে অন্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের অবস্থান বোঝা যায় বিভিন্ন সূচকে। সে রকম একটি সূচক হলো জাতিসংঘের ই-গভর্নমেন্ট ডেভেলপমেন্ট ইনডেক্স (ইজিডিআই)। প্রতি দুই বছর পরপর এই প্রতিবেদনে জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলোয় অনলাইনে সেবার হার, টেলিযোগাযোগ অবকাঠামো ও দক্ষ মানবসম্পদের চিত্রটি তুলে ধরা হয়। ২০২২ সালের এই সূচকে দেখা যায়, পাকিস্তান, নেপাল ও ভিয়েতনামের চেয়ে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। পিছিয়ে আছে ভারত ও শ্রীলঙ্কার চেয়ে। ১৯৩টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১১১তম।