...তাদের মুখে ছাই পড়েছে, পড়ছে, পড়বে
হতাশাবাদী ও অপপ্রচারকারীরা সব সময় নেতিবাচক প্রচারণা চালালেও বাংলাদেশের এগিয়ে চলার পথ রুদ্ধ করা যাচ্ছে না। গত বছরের শেষদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীকে আশ্বস্ত করে বলেছিলেন, ‘বিশ্বব্যাপী দুর্ভিক্ষের পদধ্বনি শোনা গেলেও আমাদের অর্থনীতি এখনো যথেষ্ট শক্তিশালী। অনেকে বলেছিল শ্রীলঙ্কা হবে, এই হবে, সেই হবে—তাদের মুখে ছাই পড়েছে। সেটা হয়নি, ইনশা আল্লাহ হবেও না।’ বিদায়ী বছরের বিভিন্ন সময় কত ধরনের গুজব ও আশঙ্কার কথাই তো ছড়ানো হয়েছে, কিন্তু বড় কোনো অঘটন বা ধাক্কা ছাড়াই আমরা বছরটি বিদায় করতে পারছি। নতুন বছর সামনে রেখে, বিশেষ করে বছরের শুরুতে হতে যাওয়া জাতীয় সংসদ নির্বাচন, তার ফলাফল, মার্কিন নিষেধাজ্ঞাসহ কত নেতিবাচক প্রচারণাই না চলছে। এসব কুডাকা পাখিদের মুখেও ছাই পড়বে, এটা বলা যায় অতীত অভিজ্ঞতার আলোকেই। তা ছাড়া বাংলায় কথা আছে, শকুনের অভিশাপে...।
দুই বছরের করোনার ধাক্কা সামলে উঠতে না উঠতেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে (এর সঙ্গে নতুন করে যুক্ত হয়েছে গাজায় নৃশংসতা) পৃথিবীজুড়ে ভয়াবহ এক সংকট তৈরি হয়েছে। জাতিসংঘ উন্নয়ন কার্যক্রমের (ইউএনডিপি) প্রধান আখিম স্টেইনার এক বছর আগেই বলেছিলেন, বিশ্বের ৫৪টি উন্নয়নশীল দরিদ্র দেশ দেউলিয়া হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। এই যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী খাদ্যসংকট দেখা দেওয়ার আশঙ্কা জাতিসংঘের মহাসচিব নিজেও ব্যক্ত করেছেন। যুদ্ধের কারণে খাদ্যপণ্য সরবরাহে সমস্যা হওয়ায় দাম বাড়ছে। পৃথিবী যেহেতু এখনো পুরোপুরি ক্ষুধামুক্ত হয়নি, সেহেতু খাদ্য উৎপাদন ও সরবরাহ বিঘ্নিত হলে খাদ্যসংকটের কথাটি সামনে আসে। খাদ্য এমন একটি অতিজরুরি দ্রব্য, যা প্রতিটি মানুষের বেঁচে থাকার জন্য অপরিহার্য। খাদ্যের মতো এমন জরুরি জিনিস নিয়ে যে রাজনীতি হয় না, তা-ও নয়। বিশ্বব্যাপী যখন অর্থনৈতিক, জ্বালানি ও খাদ্যসংকটের আগাম আভাস পাওয়া যাচ্ছে, তখন খাদ্য নিয়ে অপপ্রচার ও রাজনীতি থেকে বিরত থাকাই শ্রেয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একাধিক বক্তৃতায় খাদ্যসংকটের ইঙ্গিত দিয়ে উৎপাদন বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী অবশ্য এ কথা কখনো বলেননি যে বাংলাদেশে দুর্ভিক্ষ হবে; বরং তিনি এটাই বলেছেন, পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার মতো অবস্থা আমাদের আছে। তিনি বৈশ্বিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রতি ইঞ্চি জমি আবাদের আওতায় আনতে বলেছেন।
এটা ঠিক যে বিশ্বে খাদ্য উৎপাদন কমে গেলে পরিস্থিতি খারাপ হবেই। আমরা খাদ্য উৎপাদনে এখনো স্বয়ংসম্পূর্ণ নই। আমাদের খাদ্যপণ্য আমদানি করতে হয়। চাল-গমসহ যা যা আমদানি করতে হয়, বিশ্বে তার উৎপাদন কমে গেলে আমরা তো সংকটে পড়তেই পারি। তার ওপর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ খাদ্যপণ্যের দাম বাড়িয়েছে। বিশ্বজুড়েই অর্থনীতির চরম অবস্থা যাচ্ছে। দারিদ্র্যের হার বাড়ছে। মানুষ কর্মহীন হচ্ছে, গরিব হচ্ছে। আয়-ব্যয়ের বিরাট ব্যবধানে অনেকেই হিমশিম খাচ্ছে। এই পরিস্থিতিকে কোনো অবস্থায়ই স্বাভাবিক বলা যাবে না।
বৈশ্বিক সংকটের প্রেক্ষাপটে অন্য দেশগুলোর মতো বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। টাকার সঙ্গে ডলারের বিনিময় হার অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। ঝুঁকিতে পড়েছে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার আয় ও ব্যয়ের ভারসাম্য। সংকট মোকাবিলায় আইএমএফ থেকে সাড়ে চার বিলিয়ন (৪৫০ কোটি) ডলার ঋণ করেছে বাংলাদেশ। এই অর্থ অবশ্য একবারে পাওয়া যাবে না, তিন বছরে পাওয়া যাবে। এই ঋণচুক্তির সময় বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের লিড ইকোনমিস্ট কনসালট্যান্ট ড. জাহিদ হোসেন বলেছিলেন, আইএমএফের সঙ্গে এ ধরনের ঋণচুক্তি বাংলাদেশের জন্য স্বস্তির। তিনি মনে করেন, এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ঋণ প্যাকেজ থাকলে বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) কিংবা অন্যান্য প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি নিয়ে মাথা খাটাবে না।