এক দশকের দুর্বলতম ও সমস্যাসংকুল বছর ২০২৩

বণিক বার্তা ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য প্রকাশিত: ২৭ ডিসেম্বর ২০২৩, ১০:৩১

ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য অর্থনীতিবিদ ও নীতি বিশ্লেষক। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো। জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসির (সিডিপি) সদস্য এবং এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্লাটফর্ম, বাংলাদেশের আহ্বায়ক। ২০২৩ সালে বাংলাদেশের অর্থনীতি কেমন ছিল এবং নতুন বছর কী সংকট ও সম্ভাবনা নিয়ে হাজির হচ্ছে এমনতর নানা ইস্যু নিয়ে সম্প্রতি কথা বলেছেন বণিক বার্তার সঙ্গে।


২০২৩ আমাদের অর্থনীতির জন্য কেমন ছিল এবং অর্থনীতির চ্যালেঞ্জের জায়গাগুলো কী ছিল?


ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য: সাম্প্রতিক অর্থনীতির ইতিহাসে বাংলাদেশের সবচেয়ে দুর্বল বছর হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে ২০২৩ বর্ষপঞ্জিটি। আগামী দিনের বিশ্লেষকরা হয়তো এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে দুর্বল বা সমস্যাসংকুল বছর হিসেবে বিবেচনা করবেন। এর একটি বড় কারণ হতে পারে কভিড-উত্তরকালে যে পুনরুজ্জীবনের প্রক্রিয়া ছিল তা এ বছর এসে শ্লথ হয়ে এসেছে। বিচ্ছিন্নভাবে কয়েকটি খাতে প্রবৃদ্ধি হলেও সার্বিক প্রবৃদ্ধি হার আশাব্যঞ্জক ছিল না। প্রবৃদ্ধির ধারা ক্রমান্বয়ে শ্লথ হয়েছে। ২০২৪ সালের জুনে চলতি অর্থবছর শেষ হলে হয়তো অবক্ষয়ের চিত্রটি পুরোপুরিভাবে ফুটে উঠবে আমাদের সামনে। কভিডের দুই বছর বাদ দিলে প্রবৃদ্ধির হার হয়তো সর্বনিম্ন স্তরে চলে যাবে। এক্ষেত্রে বড় কারণ হিসেবে বলা যায় যে এ সময়ে ব্যক্তি খাত তো বটেই, সরকারি খাতেও বিনিয়োগের পরিমাণ অত্যন্ত নগণ্য। এতে অভ্যন্তরীণ কর্মসংস্থানে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। যদিও এ সময়ে বিদেশে কাজের সন্ধানে গেছে দ্বিগুণের অধিক অনাবাসিক শ্রমিক। যদিও সে তুলনায় আমাদের রেমিট্যান্সপ্রাপ্তি নগণ্য। অর্থনীতি যে সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে তা চিহ্নিত করতে গেলে প্রথমে বলতে হবে, প্রবৃদ্ধির হার শ্লথ হয়ে যাওয়া, ব্যক্তিগত ও সরকারি খাতে বিনিয়োগ কমে যাওয়া, বিশেষ করে অভ্যন্তরীণ বাজারে। এতে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে ঢিলেঢালা অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এর কারণ পেছনে ফিরে দেখতে হলে আমরা যা দেখব, আমাদের আর্থিক খাত অনেক দুর্বল, কর আহরণের ক্ষমতা বিশ্বের সর্বনিম্নদের মধ্যে। এতে সরকারের খরচ করার ক্ষমতা অনেক সীমিত হয়ে গেছে। সরকারের খরচ বাড়িয়ে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করা, অর্থাৎ সম্প্রসারণশীল অর্থনীতি করার জন্য যে সক্ষমতাটা দরকার তা এ মুহূর্তে সরকারের নেই। ফলে সরকারি বিনিয়োগ কমার কারণ হিসেবে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের হার সর্বনিম্নে পৌঁছেছে। এর পেছনের কারণ হলো সরকারের হাতে পর্যাপ্ত টাকা নেই। এর উল্টো পাশের কথা যদি বলি, এতদিন ধরে আমরা আমাদের আর্থিক খাতের দুর্বলতার কথা জানতাম, বাজেট ঘাটতির পরিমাণ ৪, ৫ বা ৬ শতাংশের মধ্যে আটকে রাখতে পেরেছিলাম। এতদিন কম খরচ করে কম আদায় ও কম আদায় করে কম খরচের মাধ্যমে চলছিলাম। কিন্তু এখন যে সমস্যাটা দেখা দিয়েছে যা আগে ছিল না তা হলো গত বছর বা এর কিছু আগ মুহূর্ত থেকে শুরু করে বৈদেশিক খাতের লেনদেনেও অসামঞ্জস্য দেখা দিয়েছে। অর্থাৎ যে হারে রফতানি বেড়েছে তার চেয়ে বেশি হারে আমদানি বেড়েছে। আমাদের গুরুত্বপূর্ণ আমদানি পণ্যের মধ্যে রয়েছে জ্বালানি, খাদ্য, সার ইত্যাদি। এছাড়া নানা পুঁজিপণ্য, গার্মেন্টসের নানা কাঁচামাল। আমাদের এসব আমদানি পণ্যের আর্থিক মূল্য রফতানি মূল্যের চেয়েও বেড়ে গেছে। এর সঙ্গে সঙ্গে যা হয়েছে, এতদিন যে বড় বড় ঋণ নিয়েছি তা পরিশোধের সময় হয়েছে। অথবা এগুলো ছিল স্বল্পমেয়াদি বা বাণিজ্যিক কিংবা ব্যয়বহুল ঋণ। যেমন কর্ণফুলী টানেল উদ্বোধন হওয়ার আগেই ঋণ পরিশোধের সময় শুরু হয়ে গেছে। আগামী বছর রূপপুর প্রজেক্টের ঋণ পরিশোধে নামতে হলে বিষয়টি আরো পরিষ্কার হবে। অর্থাৎ কেবল বাণিজ্যিক লেনদেনে ঘাটতি বেড়েছে তা না, বরং আর্থিক খাত থেকে অধিক অর্থ এনে ঋণ শোধ করতে হচ্ছে। এতে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ কমেছে। ২০২৩ সাল বৈদেশিক মুদ্রার মজুদহানির বছর হিসেবেও চিহ্নিত হয়ে থাকবে।


বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পতনের ফলে কী হয়েছে?


ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য: রিজার্ভ পতন একটা উদ্বেগের জায়গা হিসেবে ছিল এবং এর প্রভাব পড়েছে অন্যান্য জায়গায়। বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ কমে যাওয়ায় আমরা এলসি বা ঋণপত্র নিয়ন্ত্রণ করেছি। এলসি নিয়ন্ত্রণের মানে হলো ব্যাংক পর্যাপ্ত মুদ্রা সরবরাহ করতে পারেনি। আর ব্যাংক পর্যাপ্ত মুদ্রা সরবরাহ করতে না পারার কারণে প্রকল্পে বিনিয়োগ হয়নি। যেহেতু বৈদেশিক বাণিজ্যে লেনদেনের ওপর চাপ সৃষ্টি হওয়ায় আমাদের স্থানীয় মুদ্রা অর্থাৎ টাকার ওপরেও চাপ সৃষ্টি হয়েছে। ফলে এ সময়ে টাকার মূল্যমানের অবনমন ঘটেছে ২৫-৩০ শতাংশ। এ বৈদেশিক লেনদেনের জায়গায় যে ভারসাম্যহীন অবস্থা গেল যা বিনিয়োগের জায়গায় মুদ্রার ওপর যেমন চাপের সৃষ্টি করল, তেমনি পণ্যমূল্য বাড়ার কারণে মূল্যস্ফীতি আরো বেড়েছে। এ বছরের মূল্যস্ফীতির প্রবণতা লক্ষ করে দেখব এটি যে কেবল শহরে বেড়েছে এমন নয়, গ্রামেও বেড়েছে। গ্রামের খাদ্য মূল্যস্ফীতি বরং আরো ভয়ানক রূপ ধারণ করেছে। এ পরিস্থিতি সামাল দেয়ার জন্য সরকার আগে বড় ধরনের প্রকল্প ঋণ করেছে এবং এবার বাজেট সমর্থনের জন্য বড় ঋণ করেছে। ফলে আমাদের দায়দেনা পরিস্থিতি আরো জটিল হয়েছে। গত পাঁচ বছরে আমাদের মাথাপিছু পরিশোধযোগ্য দায়দেনা প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। ৩০০ বা ৩৫০ ডলার থেকে এখন মাথাপিছু দেনা ৬০০ ডলারে চলে গেছে। আগামী দিনের দায়দেনা পরিস্থিতি টেকসই রাখা কষ্টসাধ্য হয়ে গেছে। আমরা যদি ২০২৩ সালটি দেখি তাহলে তিন রকমের সমস্যার মধ্য দিয়ে আমরা গেছি। প্রথমত, বৈশ্বিক অর্থনীতিতে বিভিন্ন ধরনের উত্থান-পতনের চাপ। দ্বিতীয়ত, সামষ্টিক ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে দুর্বলতা। তৃতীয়ত, বহুদিন ধরে প্রয়োজনীয় সংস্কারগুলো না করার ফলে সৃষ্ট সংকট। এর মধ্যে রয়েছে ব্যাংক খাতের অনাদায়ী ঋণ, স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করার মাধ্যমে সম্পদ আহরণ বাড়াতে না পারা, পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যর্থতা, সরকারি বিনিয়োগে কার্যকারিতা বিচার বা অতিমূল্যায়িত প্রকল্প যেন না হয় সেদিকে দৃষ্টি না দেয়া। এ জায়গাগুলোয় সমস্যা সমাধান না হওয়ায় সংকট বেড়েছে। অবকাঠামগত উন্নয়নে আমরা যে ধরনের ঋণ নিয়েছি তা যথাযথ বিবেচনাপ্রসূত হয়নি। উচ্চাকাঙ্ক্ষা থেকে নেয়া সেসব ঋণ পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তুলছে। সংকটের পেছনে এ তিনটি বড় কারণ আমরা দেখছি।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও