![](https://media.priyo.com/img/500x/https://cdn.ajkerpatrica.net/contents/cache/images/720x0x1/uploads/media/2023/12/26/d6d8e9b91202200dcf62b2b6c67fe4d7-658a2ec64b91a.jpg)
রাজনীতি যখন লাভজনক পেশা
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মনোনয়নপত্রের সঙ্গে প্রার্থীর হলফনামা জমা দেওয়ার নিয়ম কার্যকর হয় ২০০৮ সাল থেকে। যার মধ্যে প্রার্থীর আয়-ব্যয়, সম্পদের হিসাব, তাঁর ওপর নির্ভরশীলদের আয়-ব্যয়, সম্পদের হিসাব-সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য অন্তর্ভুক্ত থাকে। মন্ত্রী-এমপিরা হলফনামার মাধ্যমে গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যে অর্থ-সম্পদের হিসাব দিয়েছিলেন, আর এবারের দ্বাদশ নির্বাচনের হলফনামায় সম্পদের হিসাবে আকাশ-পাতাল পার্থক্য দেখা গেছে। হলফনামা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী-এমপিদের পাঁচ-সাত থেকে কারও কারও শত গুণ পর্যন্ত সম্পদ বেড়েছে। শুধু মন্ত্রী-এমপিরাই নন, তাঁদের স্ত্রীরাও কোটি কোটি টাকার সম্পদের মালিক হয়েছেন।
অনেকের শূন্য থেকে কোটি কোটি টাকার সম্পদ বেড়েছে। তাঁদের স্ত্রীদের অনেকের কোনো আয়ের উৎস না থাকলেও, অর্থ-সম্পদের পরিমাণ স্বামীদের চেয়েও কয়েক গুণ বেশি। যেন ‘আলাদিনের চেরাগ’ পেয়েছেন তাঁদের স্ত্রীরা।
বাড়ি, গাড়ি, স্বর্ণালংকার কিংবা নগদ টাকা, এমপি-মন্ত্রী ও তাঁদের স্ত্রী-সন্তানদের সবকিছুই বাড়ছে উল্লেখযোগ্য হারে। জমিজমা, কোম্পানির শেয়ার বা ব্যাংকের আমানত বেড়েছে অনেকের। কিছু কিছু ক্ষেত্রে বাড়ছে বার্ষিক আয়ের পরিধিও। লাখপতি থেকে কোটি কোটি টাকার সম্পদ হয়েছে।
তার মানে রাজনীতি করা, মন্ত্রী-এমপি হওয়া এখন খুবই লাভজনক একটা পেশায় পরিণত হয়েছে। এতে করে রাজনীতিবিদদের প্রতি সাধারণ মানুষ বিরূপ হয়ে উঠছে। অনেকেই কটাক্ষ করে বলছেন, রাজনীতি এখন কম পুঁজিতে বড়লোক হওয়ার সবচেয়ে ‘ভালো’ উপায়।
ক্ষমতার রাজনীতি বড়লোক হওয়ার সেই আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপে পরিণত হয়েছে। এই প্রদীপ সবাই চায়। তাই তো ক্ষমতাসীনেরা যেকোনো মূল্যে ক্ষমতা ধরে রাখতে চায়। বিরোধীরা যেকোনো উপায়ে ক্ষমতায় যেতে চায়। ক্ষমতা নিয়ে তাই এত মারামারি, খেয়োখেয়ি। কয়েক দশক ধরে এক নতুন ব্যবস্থা তৈরি করা হয়েছে।
এটা অত্যন্ত সর্বনাশা প্রবণতা। এই প্রবণতা থেকে রাজনীতিকে বের করে আনা দরকার। কিন্তু প্রশ্ন হলো, কাজটা কে করবে? সমাজের বিবেকবান মানুষেরা, শিক্ষিত, সচেতন, জ্ঞানী-গুণী-পণ্ডিত মানুষেরা ক্রমে রাজনীতি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। এতে করে রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তিরা আরও বেশি বেপরোয়া হয়ে উঠছেন। তাঁরা একচেটিয়া ক্ষমতা ভোগ ও প্রয়োগ করছেন। কোথাও কোনো জবাবদিহি থাকছে না। ক্ষমতা ভোগ ও প্রদর্শনের একটা সিস্টেম তৈরি হয়ে যাচ্ছে। এই সিস্টেম ক্রমে শক্তিশালী ও অজেয় হয়ে উঠছে।