চ্যালেঞ্জের শেষ ধাপ, নতুন চ্যালেঞ্জের আগে
বিএনপিবিহীন নির্বাচনের যে চ্যালেঞ্জগুলো সরকারকে মোকাবিলা করতে হচ্ছে, তার এখন শেষ ধাপ চলছে। এই ধাপে তিনটি প্রধান সমস্যা দেখা দিয়েছে সরকারের সামনে।
এক. নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণাকে কেন্দ্র করে এবং হরতাল-অবরোধের ঘোষিত কর্মসূচিকে ভিত্তি করে দেশের বিভিন্ন স্থানে নাশকতার যে নৃশংস ঘটনাবলি ক্রমেই বেড়ে চলেছে এবং ঘনীভূত হচ্ছে, সেগুলো বন্ধ করা।
দুই. আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীক নৌকা মার্কার প্রার্থীদের সমর্থকগোষ্ঠীর সঙ্গে ডামি প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘাত-সংঘর্ষ বন্ধ করে একটি শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত করার বিষয়ে জনমনে আস্থার সঞ্চার করা। তিন. নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ও অংশগ্রহণ বাড়ানো।
শেষ ধাপের এই চ্যালেঞ্জগুলো আগামী দিনের, অর্থাৎ নির্বাচনের পরবর্তী সময় নতুন চ্যালেঞ্জ হয়ে আসবে অসহযোগ আন্দোলন। অবশ্য ইতিমধ্যেই বিএনপি জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সরকারকে অসহযোগিতা করার জন্য। যত দূর শোনা যায় তাতে ওই অসহযোগের কর্মসূচি হবে দীর্ঘমেয়াদি ও ধারাবাহিক। নতুন সরকার কতটা দক্ষতার সঙ্গে সেই পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে পারবে, তার ওপর নির্ভর করবে চ্যালেঞ্জের মাত্রা এবং কর্মসূচির সাফল্য। সেই ভাবনা ভাবার জন্য আরও কিছু সময় সরকারের হাতে আছে। এখন গুরুত্বপূর্ণ হলো শেষ ধাপের চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করা।
বিএনপি এবং সমমনা দলগুলোর নির্বাচন প্রতিহত করার ঘোষণা ভালোভাবেই বহাল রয়েছে। হরতাল-অবরোধের কর্মসূচিও চলছে। এর সঙ্গে গত বুধবার থেকে যুক্ত হয়েছে সরকারকে সহযোগিতা না করার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান। এর আগে থেকেই অবশ্য নাশকতার ঘটনাবলি ঘটে চলেছে। সেই নাশকতা বাস-ট্রাক-গাড়িতে অগ্নিসংযোগ থেকে ট্রেনে আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে মারা পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। আমরা স্মরণ করতে পারি ২০১৪ সালের কথা। নির্বাচন প্রতিহত করার জন্য সে বছর সব ধরনের যানবাহনে আগুন লাগিয়ে অনেক মানুষ হতাহতের ঘটনা ঘটানো হয়েছে। কিন্তু নির্বাচন প্রতিহত করা যায়নি। তাহলে বিএনপি কেন ভাবছে যে এবার সেই একই কায়দায় তারা সফল হতে পারবে?
ভাবতে পারে একটি কারণে। তা হলো, আন্দোলনের নানারূপ কর্মসূচি দিয়ে তারা সরকারকে চাপে রাখবে। তাতে সরকারের দক্ষতা ও কাজের স্বাভাবিক গতি ব্যাহত হবে। নির্বাচনও দেশে-বিদেশে প্রশ্নবিদ্ধ এবং অগ্রহণযোগ্য হবে।
ক্রমান্বয়ে আন্দোলন জোরদার হবে এবং নাশকতা বাড়ানো হবে। এর পরিণতি হবে একটি স্বল্পকালীন সরকার। সরকার বাধ্য হবে তাদের দাবি অনুযায়ী নতুন নির্বাচন আয়োজন করতে। বিদেশি বন্ধুরা তখন তাদের আরও বেশি সহায়ক হবেন। তাদের এই কৌশলের বিপরীতে সরকার কী কৌশল অবলম্বন করে এবং সেই কৌশল কতটা কার্যকর হয় তার ওপর নির্ভর করবে জয়-পরাজয় বা সাফল্য-ব্যর্থতা। যদিও সরকারের কৌশলের একটি অংশ হচ্ছে, বিএনপি এবং তার সমমনাদের সন্ত্রাসী চরিত্র দেশে-বিদেশে প্রকটভাবে উন্মোচন করে দেওয়া।
তথাপি সরকার যদি আগুনসন্ত্রাস নিয়ন্ত্রণ করতে না পারে, তাহলে নির্বাচনের আগেই দেশে-বিদেশে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে।