মনোনয়ন মৌসুম: এমপি যদি হতে চান
আমরা যখন জানতে পারি, নৌকার টিকিট পেতে একই পরিবার থেকে ভাবি ও দেবর মনোনয়নপত্র কিনেছেন, তখন বুঝতে পারি, এটি এক কৌশলগত সিদ্ধান্ত। একই পরিবার থেকে ভাই-বোনসহ মোট পাঁচজন মনোনয়নপ্রত্যাশীও দেখলাম। এক আসনে দেখলাম প্রার্থী হতে মনোনয়নপত্র কিনেছেন সাবেক এক সংসদ সদস্যের (প্রয়াত) তিন ছেলে।
আপাতদৃষ্টিতে এ চিত্রকে খুবই স্বাভাবিক ও আনন্দদায়ক মনে হয়। নির্বাচনের সময় হয়েছে। দেশের যে কোনো নাগরিক নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করতে পারেন। তবে একই পরিবার থেকে একাধিক ব্যক্তির এমপি হতে চাওয়ার বিষয়টি আমাদের একটু অন্যরকম ভাবায় এবং মনে বেশ কিছু প্রশ্নের উদয় হয়।
পরিবারের কেউ না কেউ মনোনয়ন পেয়েই যাবেন– এ আশা তাদের নিশ্চয় আছে। আমরা বুঝতে পারি, এই পরিবারগুলো ক্ষমতা চায়। নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায়িত হয়ে আর্থসামাজিকভাবে প্রভাবশালী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে চায়। পরিবারের একজন প্রভাবশালী হলে বাকি সবাই যে তেমনটা হন, তা আমরা ৫২ বছর ধরে দেখছি। আমাদের রাজনীতি হয়তো আগামী ৫০ বছরেও পরিবারকেন্দ্রিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে না। কারণ বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির চর্চায় আমরা পরিবারের সদস্য ছাড়া আর কাউকে বিশ্বাস করি না।
মনোনয়ন চাইছেন খেলা ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের তারকারাও। সেটাও খুব স্বাভাবিক– নিউ নরমাল। আমরা যেসব নিবেদিত রাজনীতিক অতীতে দেখেছি বা ইতিহাসে পড়েছি, তেমন রাজনৈতিক সংস্কৃতি এখন আর বাংলাদেশে নেই। মানুষে যুবকবেলা থেকে সক্রিয় রাজনীতি করে তারপর এমপি হবেন, তেমন পরিস্থিতি এখন নেই। বর্তমানে যে কোনো পেশায় অনেক সময় কাটিয়ে হঠাৎ রাজনীতিবিদরূপে আবির্ভাব হওয়া সম্ভব। তবে আমরা শুনতে পাচ্ছি (ভুলও হতে পারে), এই তারকা কারও কারও সন্তানকে স্বেচ্ছায় বিদেশে ভূমিষ্ঠ করানো হয়েছে, যাতে সেই শিশু জন্ম থেকেই ওই দেশের নাগরিক হতে পারে।
শুধু এরা নন; আমাদের অনেকেরই এক পা বিদেশের মাটিতে। এখন ‘সেই’ আমরা যদি বাংলাদেশের আইনপ্রণেতা হতে চাই; লাখ-কোটি মানুষের ভাগ্যের দায়িত্ব নিতে চাই; তাহলে তা কতটা শোভন হবে বা ‘বিদেশে এক পা দেওয়া আমরা’ বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের (যাদের দুই পা-ই এই মাটিতে) জীবন কতটা শুভ করতে পারব– তা নিয়ে সংশয় এবং প্রশ্ন রয়েই যায়। এবং সেই প্রশ্নের উত্তর
বাতাসে ওড়ে।