ধরপাকড়, কারাদণ্ড ও গুপ্ত হামলার ‘স্বচ্ছ’ নির্বাচন
ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টার ১০ জুলাই তাদের শীর্ষ সংবাদে বলেছিল, আন্দোলন নিয়ন্ত্রণে পুরোনো মামলা সচল করার উদ্যোগ। পরদিনও আরেকটি খবরে তারা জানায়, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ হাইকোর্টে স্থগিত হয়ে থাকা ২৫টি মামলা বাছাই করেছে এবং সেগুলো তদন্ত কর্মকর্তাদের দ্রুত তদন্ত শেষ করে মামলা শুনানির ব্যবস্থা নিতে ডিএমপির ডেপুটি কমিশনারদের নির্দেশ দিয়েছে। এসব খবরের সূত্র ছিল পুলিশের পদস্থ কর্মকর্তাদের একটি সভার ফাঁস হওয়া কার্যবিবরণী। ১৭ জুলাই ভয়েস অব আমেরিকায়ও ইংরেজিতে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়, যার শিরোনাম হচ্ছে, ‘বাংলাদেশি পুলিশ অ্যাকিউজড অব কনস্পায়ারিং অ্যাগেইনস্ট অপজিশন ক্যান্ডিডেটস।’
গত কয়েক দিনের পত্রিকার পাতাগুলো দেখলে কারও মনে কোনো সন্দেহ থাকলে তা নিশ্চয়ই দূর হয়ে গেছে। বিভিন্ন পত্রিকার পরিসংখ্যানে গরমিল দেখা গেলেও মোটামুটি নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে যে বিএনপির নেতা-কর্মীদের মামলা ও দণ্ডিত হওয়ার নতুন রেকর্ড হয়েছে। সমকাল লিখেছে ৬ মামলায় ১৩৬ জনের সাজা দেওয়ার কথা। যুগান্তর বলছে ৭ মামলায় ১৪০ জনের দণ্ড হওয়ার কথা।
তবে সবচেয়ে বিস্ময়কর খবর হচ্ছে, চার বছর আগে মৃত আবু তাহের দাইয়াকেও দেওয়া হয়েছে দেড় বছরের জেল। মৃত ব্যক্তিদের মরণোত্তর কারাদণ্ডের পাশাপাশি গুম হওয়া ব্যক্তিরাও বাদ যাননি। ১০ বছর আগে গুম হওয়া সাজেদুল ইসলাম সুমন ও আমিনুল ইসলাম জাকিরকে আড়াই বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তাঁদের পরিবার ও প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিযোগ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তাঁদের তুলে নিয়ে গেছেন।
বিরোধীদের সাজা দিয়ে জেলে ঢোকানোর তাড়ায় কে মৃত, কে গুম, কে বিদেশে কিংবা কে ইতিমধ্যে বন্দী—এত সব দেখার ফুরসত কোথায়? ২৮ অক্টোবরের পর কত হাজার ব্যক্তির বিরুদ্ধে নতুন করে কত মামলা হয়েছে, তা কেউই নিশ্চিত করে বলতে পারে না। তবে গত ২ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্ক টাইমস ‘কোয়াইটলি ক্রাশিং ডেমোক্রেসি: মিলিয়নস অন ট্রায়াল’ শিরোনামের প্রতিবেদনে লিখেছিল, প্রায় ২৫ লাখ বিএনপি কর্মী বিভিন্ন রকমের মামলায় আদালতপাড়ায় ঘুরছেন। নিউইয়র্ক টাইমস কয়েক নেতার বিরুদ্ধে চার শর মতো মামলার কথাও লিখেছিল। শত শত মামলা থাকা কয়েকজনের ইতিমধ্যেই সাজা দিয়ে কারাভোগের ভাগ্য নির্ধারণ হয়ে গেছে।
প্রথম আলোতেই কদিন আগের খবরের শিরোনাম, ‘কারাগারে গাদাগাদি, ধারণক্ষমতার দ্বিগুণ বন্দী’। নির্বাচনের আগেই খুন-ডাকাতি-রাহাজানি মামলার আসামিদের সাধারণ ক্ষমায় মুক্তি না দিলে রাজনৈতিক বন্দীদের কোথায় ঠাঁই হবে, সেটাও এক বড় প্রশ্ন। এর সঙ্গে শুরু হয়েছে সন্দেহভাজন বিএনপি কর্মীদের বাড়িতে না পেলে পরিবারের সদস্যদের ধরা।