দায় নিতে হবে ক্ষমতাসীনদেরও
ক্ষমতায় থাকার জন্য একটি রাজনৈতিক দল নানা কৌশলের আশ্রয় নেবে, এটা অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু আমাদের দেশে এই কৌশলটা অনেক ক্ষেত্রেই হয় চরম। মেরে-কেটে, হামলা করে মামলা দিয়ে, পুলিশ ও গোয়েন্দাদের ব্যবহার করে বিরোধী দলের মেরুদণ্ড ভেঙে ফেলার চেষ্টা করা হয়। ক্ষমতায় থাকার জন্য সামরিক শাসকরা এমন পথ অবলম্বন করেছে। গণতান্ত্রিক তকমাধারী রাজনৈতিক দলগুলোও একই কাজ করে যাচ্ছে। এ ব্যাপারে বর্তমান শাসক দলও ব্যতিক্রম নয়।
দেশে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তারিখ যত ঘনিয়ে আসছে, রাজনৈতিক উত্তেজনাও তত বাড়ছে। দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি ও সঙ্গীরা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে ধারাবাহিকভাবে হরতাল-অবরোধের মতো কর্মসূচি ঘোষণা করছে। এসব কর্মসূচিকে ঘিরে গাড়িতে আগুন দেওয়া, বোমা নিক্ষেপ, হামলার ঘটনাও ঘটছে। ক্ষমতাসীন দলের পক্ষ থেকে এ ধরনের সহিংস ঘটনার দায় চাপানো হচ্ছে, বিএনপি ও তার রাজনৈতিক মিত্রদের ওপর। প্রশ্ন হলো, এ ধরনের ঘটনার দায় কি কেবলই বিএনপির? বিএনপির এই সহিংস হয়ে ওঠার পেছনে ক্ষমতাসীন দলের কি কোনো দায় নেই? বিএনপি কেন আন্দোলনমুখী হয়েছে? কেন তারা সহিংসতার পথ বেছে নিচ্ছে? এই প্রশ্নগুলো কি অবান্তর?
টানা তৃতীয় মেয়াদ ধরে ক্ষমতায় আছে আওয়ামী লীগ। এই দীর্ঘ সময়ে রাজনৈতিক বিরোধ মেটাতে তারা তেমন কোনো উদ্যোগ নেয়নি। দেশের একটি জনপ্রিয় রাজনৈতিক দলের দাবি-দাওয়াকে উপেক্ষা করা, নানা কৌশলে তাদের রাজপথে ঠেলে দেওয়ার জন্য ক্ষমতাসীনরা দায় এড়াতে পারে না। দেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে সমুন্নত রাখা, বিরোধী পক্ষের যৌক্তিক দাবি-দাওয়াকে বিবেচনায় নিয়ে বিরোধ-বিসম্বাদ মিটিয়ে সবাইকে নিয়ে পথ চলাটা ক্ষমতাসীনদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সক্রিয় ও শক্তিশালী বিরোধী দলের অস্তিত্ব অনিবার্য। কিন্তু ক্ষমতাসীনরা একদলীয় ব্যবস্থা পাকাপোক্ত করার মিশন নিয়েই যেন মাঠে নেমেছে। বিরোধী দলের প্রতি তাদের মনোভাব ও আচরণ দেখে তাই-ই মনে হয়। নির্বাচন নিয়ে অস্থির ও সহিংস রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং পশ্চিমা দেশগুলো, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের পরোক্ষ চাপকে পাশে ঠেলে বীরদর্পে নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে ক্ষমতাসীনরা। কোনো ধরনের রাজনৈতিক সমঝোতার আগ্রহ তাদের মধ্যে আছে বলে মনে হচ্ছে না। এর আগে ২০১৪ সাল এবং ২০১৮ সালের নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নের মুখে পড়েছিল দেশে-বিদেশে। সে জন্য এবার বেশ আগে থেকেই আমেরিকা, ব্রিটেন এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন বিভিন্ন সময় অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের তাগিদ দিয়ে আসছিল। কিন্তু ক্ষমতাসীনরা সবার সব পরামর্শকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে নির্বাচনব্যবস্থা ও নির্বাচনের ফলাফল নিজেদের অনুকূলে রাখার বিধিব্যবস্থা পাকা করার পথেই হেঁটেছে।