ফিলিস্তিন-ইসরায়েল এবং আদিপুস্তকের উপাখ্যান
হামাস ইসরায়েলে এবং রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং পাশ্চাত্যের কী ক্ষতি? বোঝা মুশকিল। তবে এটা বোঝা যায় স্বার্থ থাকলে ক্ষতি হতেই পারে। কারণ স্বার্থে তখন টান পড়ে বা ঘা লাগে। ইসরায়েলে, ইউক্রেনে হামলায় যুক্তরাষ্ট্র বা পাশ্চাত্যের ক্ষতি আছে, কারণ তাদের স্বার্থ জড়িত আছে। প্রথমত, আদর্শিক স্বার্থ। পুঁজিবাদ বনাম সমাজবাদের লড়াইয়ে যুক্তরাষ্ট্র এবং পাশ্চাত্য এক পক্ষে ছিল। সে লড়াইয়ের নাম ছিল স্নায়ুযুদ্ধ বা ঠাণ্ডাযুদ্ধ বা হিমযুদ্ধ। স্নায়ুযুদ্ধ সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে বেশ আগেই এক পুরুষ আগে। তবে যুক্তরাষ্ট্র বা পাশ্চাত্যের মগজে জমে থাকা শীতলতা তথা বরফের আস্তরণ গলে বিলীন হয়ে যায়নি। ইউক্রেনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (তথা পাশ্চাত্য, ইন দ্য নেম অব ন্যাটো অর ওটান) এখনো ঠাণ্ডাযুদ্ধ বা স্নায়ুযুদ্ধ বা হিমযুদ্ধের আবহে সাঁতার কাটছে।
আর ইসরায়েল ব্রিটিশদের বেলফুর ড্রামা। ব্রিটিশের উত্তরাধিকারী প্রযোজক ইউনাইটেড স্টেটস অব আমেরিকা বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের ধর্মাদর্শের গায়েবি সুতায় বেঁধে রেখেছে বাইবেলের ওল্ড টেস্টামেন্ট বা আদিপুস্তকের বিভিন্ন আজগুবি উপাখ্যান। এ সুতোর বাঁধন ছিন্ন করা অসম্ভবের সম্ভব হওয়ার মতো সোনার পাথরবাটি। হামাসের ইসরায়েল আক্রমণের সারকথা আদিপুস্তকে নজর না দিলে বোঝা যাবে না। হামাস হোসে সারামাগোর কেইন উপন্যাসের কেইন বা কাবিল (যদিও কাবিল মুসলমানদের মধ্যে প্রশংসনীয় চরিত্র নয়, এ চরিত্রের কথা এ লেখায় রূপকার্থে ব্যবহৃত)। আর ইসরায়েল হচ্ছে নুহের কিশতি (যে ‘কিশতি’র রূপরেখা আসলে বেবিলনীয়-আসিরীয় পুরাণের গিলগামেশ এঁকেছিলেন এসব কথা ইসরায়েলি, ক্রিশ্চিয়ান প্রতœতাত্ত্বিক গবেষকদেরই, নিবন্ধকারের নয়)। হামাস ক্ষেপণাস্ত্র মেরে সেই কিশতিতে বিশাল এক ফুটো করে দিয়েছে। ইসরায়েল’স প্রাইড টু আ গ্রেট এক্সটেন্ট ইজ ড্যামেজড। বেলফুরের বেল ফেটে গেছে; আসলে ওটা বেল ছিল না, বড়জোর স্বপ্নের বিল্বফল ছিল। হামাসের হামলা ইসরায়েলের জন্য ইজ্জতকা সওয়াল। কাজেই হামাসের ওপর যুক্তরাষ্ট্র বা ব্রিটিশের রাগ হওয়াই স্বাভাবিক আর পাশ্চাত্য তথা পশ্চিম ইউরোপের বাকি দেশগুলো হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র-ব্রিটেনের বিল্বফলধারিণী নিশিসহচরী, যাকে বলে নাইট ডেমন বা লিলিথ। আবার আমরা আদিপুস্তকের পরাবাস্তব জগতে ফিরে গেলাম।