‘জীবনটা অনেক কষ্টের, তবু সম্মান নিয়ে বাঁচি’
তারা মিয়ার স্যান্ডেল দুটির অবস্থা দুই রকম। একটি এখনো চকচকে, আরেকটি ভাগাড়ে যাওয়া আগের অবস্থায়। তারা মিয়া একটি স্যান্ডেল বাঁ পায়ে পরেন। আরেকটা থাকে রিকশার সিটের তলায়। সবুজ রঙের সেই স্যান্ডেল তিনি পায়ে দেন কালেভদ্রে বাসে করে বাড়ি যাওয়ার সময়। তারা মিয়ার বাড়ি নেত্রকোনার দুর্গাপুরে। বাড়ি যাওয়ার অনেক খরচ, তাই কম যান। স্যান্ডেলটাও কম পায়ে দেওয়া হয় বলে সেটা এখনো চকচকে।
ঢাকা শহরে সবচেয়ে কম গতিতে চলা রিকশাগুলোর একটি তারা মিয়ার ভাড়া করা রিকশা। তাঁর একটি হাত পুরোপুরি অকেজো। তাই এক হাতে রিকশার ভারসাম্য রক্ষা করতে হয়। ১ সেপ্টেম্বর ছিল নয়াপল্টনে ছাত্রদলের সমাবেশ। প্রায় একই সময় কাকরাইলে ছিল জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন। ফলে রাজধানীর এই এলাকার সড়কগুলো দুপুর থেকে মানুষে ভরে যায়। লোকজনের রিকশার চাহিদা থাকলেও তারা মিয়ার অকেজো হাত দেখেই আর কেউ তাঁকে বিশেষ পাত্তা দেননি। সেদিন বিকেলে সেগুনবাগিচা থেকে ধানমন্ডি পর্যন্ত তাঁর রিকশায় সওয়ারি হয়ে হয়ে দেখা গেল, ঢাকা শহরের যানজট নিয়ে ভীষণ বিরক্ত তিনি। ক্ষীণ শরীরে পাঁজরের হাড় টেনে টেনে পথের দূরত্ব কমানোর সময় তারা মিয়ার শ্বাসকষ্ট বাড়ে। তখন নিশ্বাস নিতে তাঁকে মুখ উঁচু করে বাতাস টানতে হয় শূন্যে। এই সময়ে পেছন থেকে কোনো রিকশা আগে চলে গেলে তিনি হতাশ হয়ে তাকিয়ে থাকেন।