নেপথ্যে কাদের ইশারা
১৫ আগস্ট ১৯৭৫। সূর্যোদয়ের আগ মুহূর্তে মসজিদ থেকে যখন আজানের ধ্বনি প্রতিধ্বনিত হচ্ছিল, ঠিক সেই মুহূর্তে ঢাকার ধানমন্ডির ৩২ নম্বর রোডের নিজ বাড়িতে বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নৃশংসভাবে সপরিবারে হত্যা করা হয়। এক দল বিপথগামী সশস্ত্র ঘাতকের বুলেটের আঘাতে এদিন বঙ্গবন্ধুর নিকটাত্মীয়রাও শহীদ হন। দীর্ঘ অপেক্ষার পর এই হত্যাকাণ্ডের বিচার হলেও নেপথ্যের কুশীলব কারা–এর উত্তর মেলেনি ৪৮ বছরেও।
শোকের মাস আগস্ট এলেই প্রতিবছর নানা মহলে এ নিয়ে আলোচনা হয়– খুনিচক্রকে কারা কীভাবে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছিল। প্রশ্ন ওঠে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভূমিকা নিয়েও। কিন্তু হত্যাকাণ্ডের কুশীলব ও সুবিধাভোগীদের কখনও চিহ্নিত করা হয়নি। তাদের খুঁজতে সরকারের উদ্যোগে গঠিত হয়নি জাতীয় কমিশনও।
বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর তাঁর ঘনিষ্ঠ সহযোগী জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হয়। এ প্রেক্ষাপটে ১৯৮০ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতা হত্যাকাণ্ডের প্রথম অনুসন্ধান কমিশন গঠন করা হয় যুক্তরাজ্যে। কমিশনের এক সদস্যকে তৎকালীন জিয়াউর রহমান সরকার ভিসা না দেওয়ায় সেই অনুসন্ধানও এগোয়নি। এমন পরিস্থিতিতে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের কুশীলব প্রসঙ্গে সমকালের সঙ্গে একান্তে আলাপচারিতায় বিশিষ্টজন বলেছেন, এই হত্যাকাণ্ড আকস্মিক কোনো ঘটনা নয়। হত্যাকারী ছাড়াও এই হত্যাকাণ্ড অনেকের অভিন্ন ইচ্ছার প্রতিফলন, যা পরিকল্পনার মধ্য দিয়ে বাস্তবায়ন হয়েছে। কয়েকজন খুনির বিচার হলেও ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের বিচার হয়নি। তাদের চিহ্নিত করতে কোনো উদ্যোগও নেওয়া হয়নি। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের অনুসন্ধান সময়সাপেক্ষ হলেও তা করা জরুরি। কেননা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে সত্য উদ্ঘাটনের দায় এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। অনেকে বলেছেন, বঙ্গবন্ধু সবাইকে অতিরিক্ত বিশ্বাস করতেন। নিজের নিরাপত্তার কোনো ব্যবস্থা নেননি। এ সুযোগই কাজে লাগিয়েছে খুনিচক্র। কেউ কেউ দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের পাশাপাশি শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে চাকরিচ্যুত ও পাকিস্তান ফেরত সামরিক কর্মকর্তাদের ষড়যন্ত্রকে দায়ী করেন। আবার কেউ কেউ তৎকালীন (১৯৭২-১৯৭৫) বামপন্থি রাজনৈতিক নেতাদের ভূমিকাকেও দায়ী করেছেন।