দেউলিয়া শ্রীলংকার মূল্যস্ফীতি হার এখন বাংলাদেশের কম!
খাবার ও জ্বালানির দোকানে দীর্ঘ লাইন। দ্বিগুণ-তিন গুণ মূল্যেও মিলছিল না খাদ্য ও জ্বালানি। রিজার্ভ সংকটে দেউলিয়া শ্রীলংকার জন্য গত বছর আরো বড় সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছিল মূল্যস্ফীতি। সেপ্টেম্বরে দেশটিতে মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে দাঁড়ায় ইতিহাসের সর্বোচ্চ ৬৯ দশমিক ৮ শতাংশে। বিপাকে পড়ে গৃহস্থালি থেকে শুরু করে শিল্পোৎপাদন পর্যন্ত অর্থনীতির সব খাত-উপখাত। বছর শেষে অর্থনীতিতে সংকোচনের হার দাঁড়ায় ৭ দশমিক ৮ শতাংশ।
বছর ঘুরে এখন বিপরীত পরিস্থিতি দেশটিতে। দোকানপাটে খাদ্য ও জ্বালানির জোগান পর্যাপ্ত। সরকারের পাশাপাশি কয়েকটি বিদেশী কোম্পানিও সেখানে সুলভমূল্যে জ্বালানি বিক্রির অনুমোদন পেয়েছে। গভর্নর নন্দলাল বীরাসিংহের নেতৃত্বাধীন সেন্ট্রাল ব্যাংক অব শ্রীলংকা (সিবিএসএল) মূল্যস্ফীতির হার জুলাইয়ে ৬ দশমিক ৩ শতাংশে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে বলে দেশটির স্ট্যাটিস্টিকস ডিপার্টমেন্টের তথ্যে উঠে এসেছে। ইকোনমি নেক্সটসহ স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর তথ্য অনুযায়ী, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আসায় দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান লক্ষ্য এখন প্রবৃদ্ধি হারকে ধনাত্মক পর্যায়ে নিয়ে আসা। এজন্য এখন সুদহার নীতি সহজীকরণের কথা ভাবতে শুরু করেছেন সিবিএসএলের নেতৃস্থানীয়রা।
এক সময় ক্রমাগত রুপি ছাপিয়ে বাজারে তারল্য বাড়িয়ে তুলছিল সিবিএসএল। দেশটির মূল্যস্ফীতি পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার পেছনে এটিকেও দেখা হচ্ছিল অন্যতম বড় কারণ হিসেবে। বর্তমানে দেশটির পরিস্থিতি পাল্টে যাওয়ার পেছনে অন্যতম বড় কৃতিত্ব দেয়া হচ্ছে সিবিএসএলের গভর্নর নন্দলাল বীরাসিংহকে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকে মুদ্রা ছাপানো এখন পুরোপুরি বন্ধ রেখেছেন তিনি। সুদহার বাড়িয়ে নিয়ন্ত্রণ করেছেন ঋণের প্রবাহ। আবার এ বর্ধিত সুদহার নির্ধারণের ক্ষেত্রে অনুসরণ করা হয়েছে বাজারভিত্তিক পদ্ধতিকে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রা (বিশেষ করে ডলার) ক্রয়-বিক্রয়ের প্রবণতাকে নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে রুপির বিনিময় হারে পতন ঠেকিয়েছেন। বর্তমানে ডলারসহ অন্যান্য মুদ্রার বিপরীতে লংকান রুপির বিনিময় হার বাড়ছে। ব্যাংকগুলোয় নগদ অর্থের প্রবাহ নিয়ন্ত্রণে নেয়া হয়েছে নানামুখী পদক্ষেপ। ঋণ বাড়ানোর পরিবর্তে তফসিলি ব্যাংকগুলোকে এখন কেন্দ্রীয় ব্যাংকে নির্দিষ্ট হারে তারল্য আমানত হিসেবে জমা রাখতে হচ্ছে। সরকার কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ নিলেও তা ছাড় করায় নগদ অর্থের পরিবর্তে ব্যবহার হচ্ছে বিনিময়যোগ্য অন্যান্য সম্পদ। এতে বাজারে বা ব্যাংকগুলোয় তারল্য প্রবাহ না বাড়লেও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অভ্যন্তরীণ সম্পদ বাড়ছে।