উন্নতির যথেচ্ছাচার
বাংলাদেশের উন্নয়ন সব দেশবাসীর জন্য সুখ যে বয়ে আনেনি সেটা প্রমাণের অপেক্ষা রাখে না। উন্নয়ন বেড়েছে কিন্তু কর্মসংস্থান তার সঙ্গে যে পাল্লা দিয়ে বাড়বে তেমনটি ঘটেনি। অথচ মেহনতিদের শ্রমের ওপর ভর করেই সৌধটি দাঁড়িয়েছে। করোনাকালে মানুষ শহর ছেড়ে গ্রামে গিয়েছিল। কিন্তু গ্রামে গিয়ে খাবে কী? আয়-উপার্জনের কী বন্দোবস্ত? একটি দৃষ্টান্ত দেওয়া যাক। পাবনা অঞ্চলের এক দম্পতি ঢাকা শহরে কাজ করত পোশাক কারখানায়। কাজ হারিয়ে গ্রামে ফেরত গেছে। গ্রামে গিয়ে কাজ না পেয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে মরেছে। দুজনে। এক সঙ্গে।
ওদিকে আমাদের জন্য মহাসমস্যাগুলোর একটি হচ্ছে বন্যা। উন্নতি বন্যার অভিশাপ নিরসনের ব্যাপারে বিন্দুমাত্র কার্যকর হয়নি। বন্যা ফি বছর হয়, সমাধানের দাবি ওঠে, কিন্তু তারপর যে কে সেই। চাপা পড়ে যায়। এটাই বাস্তবতা। বন্যার কথা খুব করে বলতেন মওলানা ভাসানী। তিনি
কৃষকদের দুর্দশা জানতেন। ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের একুশ দফা প্রতিশ্রুতিগুলোর মধ্যে ৭ নম্বরটি ছিল, ‘খাল খনন ও সেচের ব্যবস্থা করিয়া দেশকে বন্যা এবং দুর্ভিক্ষের কবল হইতে রক্ষা করিবার ব্যবস্থা করা হইবে।’ ১৯৬৫ সালে ঘোষিত ন্যাপের ১৪ দফা ছিল সারা পাকিস্তানের কর্মসূচি, সেখানেও ১৩ নম্বর দফায় বলা হয়েছে, ‘পূর্ব পাকিস্তানের বন্যা প্রতিরোধ করিবার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে হইবে।’
বহু কষ্টে পাকিস্তানকে শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে বিদায় করা গেছে, কিন্তু গত একান্ন বছরেও বন্যার অভিশাপ আমাদের কাঁধ থেকে নামেনি। প্রধান কারণ, সমস্যাটা বিত্তবানদের স্পর্শ করে না। পাকিস্তান আমলেই এটা পরিষ্কার হয়ে যাওয়া উচিৎ ছিল, এবং গিয়েছিলও, যে বন্যা সমস্যার সমাধান মূলত নদীর সমস্যা। যে জন্য ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণের সময়ে পাকিস্তানের পক্ষ থেকে আপত্তি তোলা হয়েছিল।
- ট্যাগ:
- মতামত
- উন্নয়ন
- কর্মসংস্থান
- কৃষক
- ভোট কারচুপি