পরিবেশ ধ্বংসকারীকে সামাজিকভাবে বয়কট করুন
স্বাধীনতার ৫২ বছরের এক গর্বিত স্বপ্নময় বাংলাদেশে দাঁড়িয়ে আজ আমাদের চারপাশের পরিবেশ ও প্রাণ-প্রকৃতির দিকে তাকালে আমরা কী দেখতে পাই? এক রুগ্ণ, শীর্ণ, আহত এবং উন্নয়নের আঘাতে রক্তাক্ত এক পরিবেশ-প্রকৃতি। আমরা বারবার দেখি যেকোনো উন্নয়নের প্রথম কোপটা পড়ে গাছ, নদী, বনভূমি, কৃষিজমি, জলাভূমি, পাহাড় কিংবা প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর। প্রশ্নহীনভাবে দেশের সবুজবলয়, উন্মুক্ত প্রান্তর আর জলাভূমি আজ নিশ্চিহ্ন। নির্বিচার দখল ও দূষণে আক্রান্ত পরিবেশ। এখনো কৃষিনির্ভর বাংলাদেশের মূলশক্তি আমাদের প্রাকৃতিক পরিবেশ। আমাদের মৌলিক চাহিদা থেকে শুরু করে বাঁচার অক্সিজেন কিংবা সংস্কৃতির জোগান সবই আসে চারপাশের পরিবেশ-প্রকৃতি থেকে। আমাদের জীবন-জীবিকা, অর্থনীতি ও জাতীয় উন্নয়নে পরিবেশের অবদানই সবচেয়ে বেশি। কিন্তু আমরা সেই অবদান কখনোই মনে রাখছি না। স্বীকৃতি ও সুরক্ষা দিচ্ছি না। পরিবেশ আমাদের কাছে এক তীব্রভাবে পেছনে রাখা অবহেলিত অস্বীকৃত খাত। কিন্তু পরিবেশ সুস্থ না থাকলে মানুষসহ কোনো প্রাণসত্তাই সুস্থ থাকতে পারে না। পরিবেশ না বাঁচলে আমরা কেউই বেঁচে থাকতে পারব না। দেশে গত বায়ান্ন বছরে মানুষের সংখ্যা তরতর করে বেড়েছে। কিন্তু কমেছে নদী, পাহাড়, বন, গাছ ও বন্যপ্রাণীর সংখ্যা। গ্রামের পর গ্রাম সবুজ ধানক্ষেত আর পাটের জমিন হত্যা করেছে, বেড়েছে অপরিকল্পিত নগরায়ণ। আমরা হারিয়েছি তিনটি ঋতুর বৈচিত্র্য। ক্যানসারসহ জটিল অসুখ নিত্য বাড়ছে গ্রাম কী শহরে। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বেড়েছে লবণাক্ততা ও ঘূর্ণিঝড়, উত্তরাঞ্চলে দাবদাহ ও খরা, উত্তর-পূর্বে পাহাড়ি ঢল, মধ্যাঞ্চলে দীর্ঘস্থায়ী বন্যা, পার্বত্য অঞ্চলে পাহাড়ধস, দেশজুড়ে নদীভাঙন, বজ্রপাত, অগ্নিকা-, রাসায়নিক বিস্ফোরণ, জলাবদ্ধতা এবং প্লাস্টিক দূষণ। প্রাণ-প্রকৃতি পরিবেশ সুরক্ষায় আমাদের দায়িত্বশীল হতে হবে এবং অঙ্গীকারগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে। উন্নয়নের নামে পরিবেশ ধ্বংস বন্ধ করতে হবে এবং পরিবেশ সুরক্ষায় জাতীয় বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ দিতে হবে। পরিবেশ ধ্বংসের কোনো ঘটনাকে ছাড় দেওয়া যাবে না। পাহাড় কাটা কিংবা নদী দখল বন্ধ কিংবা বন সুরক্ষা নিয়ে দেশে সুস্পষ্ট আইন আছে। কিন্তু বিস্ময় ও ক্ষোভ নিয়ে আমরা দেখছি নানাভাবে পরিবেশ দখলকারীরা ছাড় পেয়ে যায়। পরিবেশ ধ্বংসকারীকে আজ সামাজিকভাবেই বয়কট করতে হবে। মানুষ হিসেবে নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে হলে প্রাণ-প্রকৃতির ওপর সব নৃশংসতা রুখে দিয়ে দাঁড়ানো ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।