প্রশিক্ষণ নিয়েও কাজ পাননি ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থী, মুখ থুবড়ে সরকারের টিটিসিগুলো
বিদেশে দক্ষ শ্রমিক পাঠানো এবং দেশের শ্রমবাজারের চাহিদা মেটাতে তরুণদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মসংস্থানে যুক্ত করার উদ্যোগ নেয় সরকার। এজন্য সারা দেশে ১০০ কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (টিটিসি) স্থাপনের পরিকল্পনা নিলেও অর্থ সংকটে প্রথম ধাপে ৩০টি কেন্দ্র নির্মাণের অনুমোদন দেয়া হয়। তবে যুগোপযোগী প্রশিক্ষণের অভাব, ব্যবহারিকের সুযোগ না থাকা, প্রশিক্ষক সংকটসহ নানা জটিলতায় সরকারের উদ্দেশ্য পূরণে ব্যর্থ টিটিসিগুলো। আবার প্রশিক্ষণ নিলেও কাজ পাননি প্রায় ৭০ শতাংশ তরুণ। তাই দিন দিনই শিক্ষার্থী কমছে উল্লেখযোগ্য হারে। এ অবস্থায় সেন্টারগুলোর টিকে থাকাই এখন দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
‘বিভিন্ন জেলায় ৩০টি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণ’ প্রকল্পের মাধ্যমে ২৭টি সেন্টার নির্মাণ করে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি)। ২০১০ সালে অনুমোদন পাওয়া প্রকল্পটি ২০১২ সালে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও দুই দফা সংশোধনী প্রস্তাবের মাধ্যমে শেষ হয় ২০১৯ সালে। দুই একর জমিতে ছয়তলা ফাউন্ডেশনের ওপর চারতলা একাডেমিক, চারতলা ডরমিটরি ও আলাদা তিনতলা অধ্যক্ষ ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। তবে সেন্টারগুলোয় আবাসনের সুবিধা অব্যবহৃত। সুযোগ মিলছে না প্রয়োজনীয় ইন্টারনেট সংযোগের। আবার জমি না পাওয়ায় তিনটি জেলায় সেন্টার নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি বলে জানা গেছে। তাই ৮২৫ কোটি টাকার মধ্যে ৯৭ শতাংশ অর্থ ব্যয় করেই প্রকল্পটি শেষ হয়।
পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আধুনিক প্রযুক্তি, গবেষণা ও পরামর্শ, দক্ষতার মাধ্যমে প্রশিক্ষণ দিয়ে তরুণদের স্থানীয় ও বিশ্ববাজারের উপযোগী করে গড়ে তুলতে কিশোরগঞ্জেও নির্মাণ করা হয় কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। সেখানে মূলত কম্পিউটার অপারেশন, গার্মেন্ট, ইলেকট্রিক্যাল, অটোমোবাইল, সিভিল কনস্ট্রাকশন, মেশিন টুলস, ওভেন গার্মেন্ট মেশিন অপারেটর, বিদেশগামী কর্মীদের তিনদিনের ওরিয়েন্টেশন ক্লাস, হাউজকিপিং কোর্স, ওয়েল্ডিং অ্যান্ড ফ্যাব্রিকেশনে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। তবে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সেন্টারটিতে ঠিকমতো ক্লাস হয় না। প্রধান প্রশিক্ষকসহ দায়িত্বশীলরা নিয়মিত কেন্দ্রে আসেন না বলেও অভিযোগ রয়েছে। এমনকি ইচ্ছেমাফিক তারা ক্লাসও বন্ধ করে দেন। ক্লাসের সময় পরিবর্তন করা হয় বিনা নোটিসে। মানিকগঞ্জের কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের চিত্রও প্রায় একই। প্রশিক্ষকের অভাবে নিয়মিত ক্লাস হয় না। কেন্দ্রে এসে ঘুরে যেতে হয় প্রশিক্ষণার্থীদের। আবার মাসে যে কয়টি ক্লাস হওয়ার কথা তা হয় না। এসব নানা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রটির প্রধান হিসেবে সম্প্রতি নতুন একজনকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।