ডিজিটাল ব্যাংকিং চালু করতে হলে আগে অবকাঠামো ঠিক করতে হবে: জাকারিয়া স্বপন
অনেক আলোচনা ও জল্পনার পর বাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রতি ডিজিটাল ব্যাংক স্থাপনের নীতিমালা চূড়ান্ত করেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী, ডিজিটাল ব্যাংক পরিচালনার জন্য শুধু প্রধান কার্যালয় থাকবে, কিন্তু নিজস্ব কোনো শাখা বা উপশাখা, এটিএম, সিডিএম অথবা সিআরএমও থাকবে না। সব সেবাই হবে অ্যাপ–নির্ভর, মুঠোফোন বা ডিজিটাল যন্ত্রে। এই ব্যাংক কোনো ওভার দ্য কাউন্টার (ওটিসি) সেবা দেবে না। দিন-রাত ২৪ ঘণ্টাই সেবা মিলবে। গ্রাহকদের লেনদেনের সুবিধার্থে ডিজিটাল ব্যাংক কিউআর কোড, ভার্চুয়াল কার্ড ও অন্য কোনো উন্নত প্রযুক্তিভিত্তিক পণ্য দিতে পারবে, তবে লেনদেনের জন্য কোনো প্লাস্টিক কার্ড দিতে পারবে না। অবশ্য এই ব্যাংকের সেবা নিতে গ্রাহকেরা অন্য ব্যাংকের এটিএম ও এজেন্টসহ নানা সেবা ব্যবহার করতে পারবেন।
বাংলাদেশে ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা নিয়ে এখন টেলিভিশন-এর সেঙ্গ কথা বলেছেন তথ্য প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ ও প্রিয়পে’র প্রধান নির্বাহী জাকারিয়া স্বপন।
দেশে এতগুলো প্রথাগত ব্যাংক থাকার পরও ডিজিটাল ব্যাংকিং নতুন কী সেবা নিয়ে আসবে, এ প্রশ্নের জবাবে জাকারিয়া স্বপন বলেন, ‘ব্যাংকিং প্রতিটি মানুষের অধিকার। কিছু ব্যাতিক্রম ছাড়া বাংলাদেশের প্রথাগত ব্যাংকগুলো উচ্চবিত্ত ও কিছু কিছু ক্ষেত্রে মধ্যবিত্তেদেরই শুধু সেবা দিচ্ছে। কিন্তু এর বাইরেও একটি বড় জনগোষ্ঠি রয়ে গেছে। অর্থনীতিতে তাদের অবদান আছে। তাদেরও ব্যাংকিং করার অধিকার আছে। তারা এই দেশের জনগন। ডিজিটাল ব্যাংক সবচেয়ে বড় যে কাজটা করবে, সেটা হচ্ছে, এই বিশাল জনগোষ্ঠিকে ব্যাংকিং প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করবে। প্রথাগত ব্যাংক তাদের কাছে পৌঁছাতেই পারবে না। ’
ইন্টারনেটের ব্যবহার বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সারা বিশ্বেই ডিজিটাল ব্যাংকিং জনপ্রিয় হচ্ছে। বাংলাদেশও এখন এর সুযোগ কাজে লাগাতে চাইছে।
‘যেহেতু ডিজিটাল পেনিট্রেশন এখন অনেক হাই, মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করছে, সিকিউরিটি সিস্টেম অনেক ইমপ্রুভ করেছে.. তাই গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলের একজন মানুষের কাছে কিন্তু আমি ডিজিটালি পৌঁছাতে পারি। তার জন্য ব্যাংকিং সেবা দিতে পারি। প্রথাগত ব্যাংকের সঙ্গে এটাই হচ্ছে ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের মৌলিক পার্থক্য। বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষ ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ের আওতায় আসবে। ’
যুক্তারষ্ট্রের মতো উন্নত দেশগুলোতে গ্রাহকের পরিচিত যাচাই, ঋণযোগ্যতার মতো ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ডিজিটালিই সম্পন্ন হয়, কারণ সেখানে গ্রাহকের ডাটাবেজ অনেক বিস্তৃত ও বিশাল। কিন্তু বাংলাদেশে এখনো মানুষের ডাটাবেজ সেভাবে তৈরি হয়নি। দেশে ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবা দিতে হলে এসব অবকাঠামো তৈরি করতে হবে বলে উল্লেখ করেন জাকারিয়া স্বপন।
তিনি বলেন, প্রযুক্তিগত দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্রের অনেক অগ্রগামী। তাই সেখানকার ব্যবস্থা অনেক বেশি ম্যাচিউরড। আমরা সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে প্রিয় ব্যাংক নামে একটি ডিজিটাল ব্যাংক চালু করেছি। আমরা প্রথম একাউন্ট দেওয়া শুরু করেছি সেখানে বসবাসরত বাঙ্গালীদের। কেউ যখন একাউন্টের জন্য আবেদন করছে, তখন ডিজিটাল সিস্টেম স্বয়ংক্রিয়ভাবে তার নাম, বাবা, মা, ছেলে-মেয়ে, ফোন নাম্বার, এমনকি ফোন নম্বরটি শেষ কবে ব্যবহার করেছেন, সর্বশেষ কোন জায়গা থেকে কেনাটাকা করেছেন, বেতন কত, বেতন নিয়মিত পাচ্ছেন কিনা, ক্রেডিট স্কোরিং কত, তালিকাভুক্ত অপরাধী কিনা, আপনার নামে কোনো মামলার রায় আছে কিনা… ইত্যাদি দুইশ থেকে আড়াইশ প্যারামিটার যাচাই বাছাই করা হয়।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও মেশিন লার্নিংয়ের মাধ্যমে এভাবে গ্রাহকের পরিচয় খুব সংক্ষিপ্ত সময়ে যাচাই বাছাই করা হয়।
‘বাংলাদেশ মাত্র ডিজিটাল যাত্রা শুরু করল। আমাদের কিন্তু অত ডেটা পয়েন্ট নাই। আমাদের দেশের মানুষজন এখনে এমএফএস ব্যবহার করে, মোবাইল ব্যবহার করে… আর খুব বেশি ডেটা পয়েন্ট কিন্তু আমাদের নাই। যে কারণে যারা ডিজিটাল ব্যাংকিংয়ে যাবেন, তাদেরকে কিন্তু এগুলো তৈরি করতে হবে। এটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ। আমি যদি আবেদন করতে যাই, তাহলে কিন্তু ব্যাংকের চিনতে হবে আমি কোন জাকারিয়া স্বপন, আমার পরিচয় কি, কোথায় থাকি, বয়স কত, শিক্ষা কি… ইত্যাদি দেখে তখন মেশিন একটা সিদ্ধান্ত নেবে যে এই লোককে ব্যাংকিং দেওয়াটা নিরাপদ কিনা। ঋণ তো পরের ব্যাপার, তাকে ব্যাংকিং চ্যানেলে আনা যাবে কিনা, আগে সেটা নির্ধারণ করতে হবে। কাউকে গ্রাহক হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার প্রক্রিয়াটাও অনেক সফিস্টিকেটেড হয়ে গেছে। সেই ধরণের সফিস্টিকেশন আনতে গেলে বাংলাদেশকে এখনো অনেকগুলো ডেটা পয়েন্ট কানেক্ট করতে হবে। ’