বাজেটে বাস্তবতা কম, স্বস্তির চেয়ে চাপ বেশি
একে দুঃসময়ের বাজেটই বলা যায়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ঠিক যেমনটি লিখেছিলেন, ‘যদিও সঙ্গী নাহি অনন্ত অম্বরে,/ যদিও ক্লান্তি আসিছে অঙ্গে নামিয়া,/ মহা আশঙ্কা জপিছে মৌন মন্তরে, /দিক্-দিগন্ত অবগুণ্ঠনে ঢাকা...।’ একদিকে অর্থনীতি নানা সংকটে। সরকারের আয় কম, ব্যয়ের চাপ বেশি। জ্বালানি ও ডলার–সংকটে ব্যবসায়ীরা বিপাকে, মূল্যস্ফীতির চাপে দিশাহারা সীমিত আয়ের মানুষ। ভূরাজনীতিও বিরূপ।
অথচ সামনেই নির্বাচন। বর্তমান মেয়াদেরও শেষ বাজেট। এখনই তো চমক দেখানোর কথা। অথচ অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য যে বাজেটটি দিলেন, তাতে চমক নেই, সমস্যার স্বীকৃতি আছে, কিন্তু সুসময়ে ফেরার ব্যবস্থা নেই। আয়-ব্যয়ের প্রস্তাবিত বাজেটে বড় ব্যয়ের পরিকল্পনা আছে, কিন্তু আয় বাড়ানোর বড় ব্যবস্থা নেই। আয়-ব্যয়ের প্রস্তাবে কল্পনা আছে, অর্জনের বাস্তবতা কম। ফলে ব্যাংকব্যবস্থা থেকে ঋণ নিয়ে বাজেট ঘাটতি মেটানোর যে আয়োজন অর্থমন্ত্রী করেছেন, তাতে মূল্যস্ফীতি আরও বাড়াবে বলেই আশঙ্কা আছে।
তারপরও অর্থমন্ত্রী ধন্যবাদ পাবেন। সাধারণত নির্বাচনী বছরের বাজেটে জনতুষ্ট অনেক কর্মসূচি নেওয়া হয়। কম গুরুত্বপূর্ণ বা প্রয়োজনীয় নানা ধরনের প্রকল্পে ব্যয় বরাদ্দ থাকে, নানাভাবে মানুষের হাতে টাকা দেওয়ার পথ খুঁজে বের করা হয়, ব্যবসায়ীদের খুশি রাখার দৃশ্যমান প্রস্তাব রাখা হয়, দেওয়া হয় নানা করছাড়। কিন্তু এবারের বাজেটে এ রকম কিছু কম। বরং এই বাজেটে চাপ বাড়বে কমবেশি সবার ওপরে। আমদানি পণ্যে ব্যাপকভাবে সম্পূরক শুল্ক আরোপ, দুই হাজার টাকা ন্যূনতম কর দেওয়ার বিধান, জমি-ফ্ল্যাটের নিবন্ধন ব্যয়ের অসহনীয় বৃদ্ধি, দ্বিতীয় গাড়ি কেনার ক্ষেত্রে কর আরোপ—এর কোনোটিই জনপ্রিয় প্রস্তাব নয়। সুতরাং এই বাজেটকে অন্তত ভোটের বাজেট বলা যাবে না। আবার অর্থনীতির চরম এই দুঃসময় কাটিয়ে ওঠার মতো একটি বাজেট দিয়েছেন, তা–ও বলা যাচ্ছে না।