যৌথ পরিবারে ফিরতে চান শহুরে মধ্যবিত্তরা
নব্বইয়ের দশকের পর থেকে ছোট হতে থাকে আমাদের পরিবার। গ্রাম থেকে শহরে অভিবাসন যত বাড়তে থাকে, ধরা-বাঁধা আয়ে নিজের অস্তিত্ব টেকাতে কেবল স্বামী-স্ত্রী আর সন্তানকেন্দ্রিক হয়ে ওঠে পরিবার। বাড়তি সদস্য মানেই চাপ। কিন্তু বিপত্তি আসতে বেশি দিন লাগেনি। এক দশকের মধ্যেই শহুরে মধ্যবিত্তরা টের পেতে থাকেন যৌথ পরিবারের উপকারিতা। শহরে সন্তান বড় করতে বয়োজ্যেষ্ঠদের উপস্থিতি দরকার হয়। সমাজবিজ্ঞানীরা বলছেন, ‘অনিচ্ছা সত্ত্বেও’ মূলত এই ‘দরকার থেকেই’ আবারও সেমি-যৌথ পরিবারের দিকে ঝুঁকতে বাধ্য হচ্ছে পরিবারগুলো।
আজ ১৫ মে বিশ্ব পরিবার দিবস। পরিবারের প্রতি দায়িত্ববোধ কেমন হওয়া উচিত, পারিবারিক বন্ধন ও পরিবারের গুরুত্ব সম্পর্কে ধারণা এবং বাস্তবিক অর্থে পরিবারের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের জন্য বিশ্বব্যাপী দিবসটি পালিত হয়। ১৯৯৩ সালের ২০ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের এক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৫ মে বিশ্ব পরিবার দিবস হিসেবে ঘোষিত হয়। জাতিসংঘ ১৯৯৪ সালকে বিশ্ব পরিবার বর্ষ ঘোষণা করেছিল। ১৯৯৬ সাল থেকেই দিবসটি পালিত হয়ে আসছে।
প্রথমে পরিবার ভাঙলো
কাজের কারণে গ্রাম ছেড়ে শহর, শহর ছেড়ে রাজধানীগামী মানুষ বেঁচে থাকার লড়াইয়েই ছোট পরিবারে আবদ্ধ হতে বাধ্য হয়। থাকার জায়গার অভাব, নির্দিষ্ট টাকায় চলার নতুন অভিজ্ঞতায় ‘স্বার্থপর’ হতে হয়। এর ওপর ‘ছোট পরিবার মানেই সুখী পরিবার’ ক্যাম্পেইনে স্বামী-স্ত্রী এবং একটি কিংবা দুটি সন্তানে আটকে পড়ে যৌথ পরিবারের মানুষ। কয়েক দশক আগেও বাবা-মা, ভাই-বোন, চাচা-চাচি, দাদা-দাদি নিয়ে ছিল যে পরিবার; মুহূর্তে তা স্বামী-স্ত্রী আর সন্তানে পরিণত হলো।
বর্তমান সমাজে একটু চোখ মেললেই দেখা যাবে বৃদ্ধাশ্রমে প্রবীণদের আহাজারি। কেননা, যৌথ পরিবার ভেঙে যে পরিবার কাঠামো গঠন হয়েছে তাতে বৃদ্ধদের সুরক্ষা ব্যবস্থা অনিশ্চিত। প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা, বিনিদ্র রজনী স্বজনবিহীন কাটান তারা। কেউ কেউ পরিবারের স্মৃতিচারণ করে চোখের পানি ফেলেন।
বেসরকারি সংস্থায় কাজ করেন বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান শাহ মোহম্মদ রিয়াজ। তিনি ঢাকায় এসে বিয়ে করে সংসারী হন, কিন্তু বাবা-মা গ্রামেই রয়ে যান। শুরুতে এতই লড়াই করতে হয় নতুন জীবনের বাস্তবতায়, অসুস্থ বাবা-মা কোনও প্রয়োজনে ঢাকায় এলেও দীর্ঘদিন রাখার পরিস্থিতি ছিল না।
এখন ফিরতে চাওয়ার পালা
একটি আদর্শ পরিবারে সকলে মিলেমিশে একত্রে বাস করে। সমাজ ও অপরাধ বিজ্ঞানীরা বলছেন, বর্তমানে পারিবারিক বন্ধন ভেঙে যাচ্ছে বলেই আমাদের সামাজিক নানা সমস্যা দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে, বাড়ছে অস্থিরতা। ফলে যারা অতি উৎসাহে যৌথ পরিবার ভেঙে বেরিয়ে এসেছিল তারা ফিরতে চাচ্ছেন।
তাদেরই একজন শাহ মোহম্মদ রিয়াজ; যিনি স্বপ্ন দেখেছিলেন—সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে তারা তিন জনের ছোট একটা ফ্ল্যাট সাজাবেন। ভাবেননি চার বছরের মাথায় বদলে যাবে তার সেই স্বপ্ন। চাকরিজীবী এই দম্পতির সন্তানকে লালন-পালন করার কেউ নেই। নিরুপায় হয়ে বাবা-মাকে নিয়ে আসেন ঢাকায়। নিজের ছোট ফ্ল্যাট ভাড়া দিয়ে স্কুলের পাশে বড় ফ্ল্যাট ভাড়া নেন। আবার বয়স্ক বাবা-মায়ের সহায়তার জন্য বড় ভাইয়ের কলেজ পড়ুয়া মেয়েটাকেও ঢাকায় এনে ভর্তি করিয়ে দেন। তিন জনের সংসার এখন হয়ে গেছে ছয় জনের।