বয়স বাড়ছে, জরুরি কিছু পরীক্ষা
বয়স বাড়ার সঙ্গে শরীরে নানা রোগব্যাধি বাসা বাঁধতে শুরু করে। আর রোগব্যাধি সব সময় বলে-কয়ে আসে না। তাই বেশিরভাগ সময় রোগের জটিল পর্যায়ে মানুষ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়। কিন্তু রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে সঠিক রোগ শনাক্ত করে যথাযথ চিকিৎসা নিলে মারাত্মক সব জটিলতা এড়ানো সম্ভব। আর রোগব্যাধি সব সময় বলে-কয়ে আসে না। ফলে বেশিরভাগ সময় রোগের জটিল পর্যায়ে মানুষ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়। কিন্তু রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে সঠিক রোগ শনাক্ত করে যথাযথ চিকিৎসা নিলে মারাত্মক সব জটিলতা এড়ানো সম্ভব। প্রাথমিক অবস্থায় রোগ শনাক্ত করতে যেসব পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয় তাকে স্ক্রিনিং টেস্ট বলে। আসুন জেনে নিই বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কী কী স্ক্রিনিং টেস্ট করা জরুরি।
রক্তের শর্করা: রক্তের শর্করার পরিমাণ বাড়লে ডায়াবেটিস হয়। অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস হৃদরোগ, স্ট্রোক, কিডনি জটিলতা, অন্ধত্বসহ নানা ধরনের জটিলতার জন্য দায়ী। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত প্রতি দু’জনের একজন জানেনই না তিনি এ রোগে আক্রান্ত। ফলে কিডনি জটিলতা, চোখের জটিলতা, স্ট্রোকসহ অন্যান্য স্নায়বিক জটিলতা, গ্যাংগ্রিন, বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণ নিয়ে ডায়াবেটিস শনাক্ত হয়। প্রাথমিক অবস্থায় ডায়াবেটিস শনাক্তকরণ ও জটিলতা এড়াতে চল্লিশের পর সবার উচিত রক্তের শর্করা বা গ্লুকোজের মাত্রা পরিমাপ করা।
লিপিড প্রোফাইল: উচ্চমাত্রার ক্ষতিকর কোলেস্টেরল ধমনির গায়ে জমে বাড়ায় হৃদরোগ আর স্ট্রোকের ঝুঁকি। তাই বয়স ৩৫ এর বেশি হলে বছরে অন্তত একবার লিপিড প্রোফাইল করতে হবে। হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ বা ডায়াবেটিস থাকলে বা এগুলোর পারিবারিক ইতিহাস থাকলে তা আরও নিয়মিত করতে হবে।
উচ্চ রক্তচাপ : উচ্চ রক্তচাপ হতে পারে যে কোনো বয়সেই। তবে চল্লিশের পর সম্ভাবনা বেশি। অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ থেকে হার্ট ফেইলিওর, স্ট্রোক ও কিডনি জটিলতা হতে পারে। তাই সুস্থ থাকতে নিয়মিত রক্তচাপ পরীক্ষা করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
চক্ষু পরীক্ষা: চল্লিশের পর সাধারণত দৃষ্টিশক্তি হ্রাস পায়। পড়তে শুরু করে চোখের ছানি। গ্লুকোমা নামক মারাত্মক রোগ হলে চোখের অপটিক নার্ভ ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে দৃষ্টিহীনতা দেখা দেয়। তাই চল্লিশের পর অবশ্যই বছরে একবার চক্ষু পরীক্ষা করা জরুরি।
ক্যান্সার স্ক্রিনিং: ক্যান্সারজনিত মৃত্যুর দ্বিতীয় প্রধান কারণ কোলোরেক্টাল ক্যান্সার। উপসর্গবিহীন এ রোগটি একেবারে শেষ পর্যায়ে ধরা পড়ে। তাই বছরে অন্তত একবার মলের অকাল্ট ব্লাড টেস্ট, প্রতি পাঁচ বছরে একবার সিগময়েডস্কোপি ও প্রতি ১০ বছরে অন্তত একবার কোলনস্কোপি পরীক্ষা করা উচিত। ঝুঁকিপূর্ণ হলে চিকিৎসকের পরামর্শে আরও ঘন ঘন পরীক্ষা করতে হবে। তাছাড়া চল্লিশের পর প্রত্যেক পুরুষের প্রোস্টেট ক্যান্সার নির্ণয়ে রক্তের পিএসএ ও ডিজিটাল রেক্টাল পরীক্ষা করতে হবে। নারীদের জরায়ুমুখের ক্যান্সারের জন্য পেপ স্মেয়ার ও স্তন ক্যান্সারের জন্য নিজে নিজে স্তন পরীক্ষা করতে হবে। স্তনে কোনো ধরনের চাকা অনুভূত হলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ম্যামোগ্রাম করতে হবে। ত্বকে যে কোনো অস্বাভাবিক দাগ বা তিল আকৃতি বা রঙে কোনো পরিবর্তন লক্ষ্য করলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
হাড়ের ঘনত্ব পরীক্ষা: হাড়ের ঘনত্ব কমে গিয়ে অস্টিওপোরোসিস হলে হাড় ভঙ্গুর হয়ে পড়ে। বয়স চল্লিশ পার হলেই এই রোগের ঝুঁকি বাড়ে। একসময় ধারণা করা হতো, অস্টিওপোরোসিসের ঝুঁকি শুধু নারীদের রয়েছে। কিন্তু নারী-পুরুষ সবারই অস্টিওপোরোসিস দেখা দেয়। তাই ৬৫ বছরের নারীদের এবং ৭০ পেরোলে পুরুষদের বিএমডি পরীক্ষার মাধ্যমে হাড়ের ঘনত্ব পরীক্ষা করতে হবে।
মৃত্যু একটি অবধারিত বিষয়। কোনো কিছু দিয়েই একে আটকানো সম্ভব নয়। তাই বলে যতদিন বেঁচে আছেন, ততদিন সুস্থভাবে বেঁচে থাকাটাই অনেক সৌভাগ্যের ব্যাপার। তাই শুধু রোগে আক্রান্ত হলেই নয়, সুস্থ থাকতে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
- ট্যাগ:
- স্বাস্থ্য
- বয়স বৃদ্ধি
- মেডিকেল টেস্ট