১৩৭টি মে দিবস গেল, শ্রমিকের নিয়তি কতটা বদলাল
মহান মে দিবস। শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার আদায়ের সংগ্রামের স্মারক হিসেবে পয়লা মে সারা বিশ্বে ‘মে দিবস’ পালিত হয়। উনিশ শতকের শেষার্ধ পর্যন্ত শ্রমিকদের ছিল না কোনো ন্যায্য মজুরির নিশ্চয়তা, ছিল না কাজের নির্দিষ্ট সময়সীমা। মালিকেরা তাদের খেয়ালখুশি মতো শ্রমিকদের দৈনিক ১২ থেকে ১৬ ঘণ্টা পর্যন্ত খাটাতেন। ১৮৭৭ সালে ন্যায্য মজুরি, আট ঘণ্টা কর্মদিবস ও অন্যান্য দাবি আদায়ের লক্ষ্যে শ্রমিকেরা ব্যাপক ধর্মঘট পালন করেছিলেন। এই ন্যায্য আন্দোলনের বিরুদ্ধে পুলিশ লেলিয়ে দেওয়া হয়। গুলিতে ১৮৮৪ সাল পর্যন্ত ৩০০ শ্রমিক আহত হন।
১৮৮৬ সালের ১ মে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগো শহরে অনেক শ্রমজীবী মানুষ নিপীড়নের বিরুদ্ধে গড়ে তুলেছিলেন দুর্বার আন্দোলন। সেদিন যুক্তরাষ্ট্রের ১১ হাজার ৫৬২টি শিল্পকারখানাসহ সব শিল্পাঞ্চলে ৮ ঘণ্টা কাজের দাবিতে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছিলেন শ্রমিকেরা।
শিকাগো শহরের ‘হে মার্কেট’ রূপ নেয় লাখো শ্রমিকের বিক্ষোভের সমুদ্রে। শহরের তিন লক্ষাধিক মেহনতি মানুষ কাজ বন্ধ রেখে সংগ্রামের লাল ঝান্ডা হাতে নিয়ে নেমে আসেন রাস্তায়। এ সময় আন্দোলনরত বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের ওপর বিনা উসকানিতে নির্বিচার গুলি চালায় পুলিশ। গুলিতে ওই দিনই নিহত হন ১০ শ্রমিক, আহত হন হাজার হাজার শ্রমিক। তবুও অব্যাহত থাকে ধর্মঘট ও আন্দোলন।
এরপর ৩ মে রিপার কারখানার সামনে প্রতিবাদ সভায় পুলিশের গুলিতে প্রাণ হারান আরও ছয় শ্রমিক। এসব হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ৪ মে শিকাগোর ‘হে মার্কেট’ স্কয়ারে স্মরণাতীতকালের বিশাল শ্রমিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে আবারও বর্বরোচিত হামলা চালায় পুলিশ বাহিনী। ওই ঘটনায় চার শ্রমিক ও সাত পুলিশ নিহত হয়।
আন্দোলনে অংশ নেওয়ার অপরাধে গ্রেপ্তার করা হয় বহু শ্রমিককে। গ্রেপ্তার ছয় শ্রমিককে প্রহসনমূলক বিচারের মাধ্যমে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। কিন্তু কর্তৃপক্ষ শ্রমিকদের দাবি মেনে নিতে বাধ্য হয়েছিল।
- ট্যাগ:
- মতামত
- মহান মে দিবস