অস্ত্রোপচার কক্ষের তালা খুলবে কবে
হৃদযন্ত্রের জটিলতা নিয়ে গাজীপুরের কাপাসিয়া থেকে ঢাকায় ছুটে আসেন ৩৪ পেরোনো লাকী আখতার। চিকিৎসক বলেছেন, দ্রুত করতে হবে তাঁর হৃদযন্ত্রের অস্ত্রোপচার। কিন্তু কীভাবে! ১২ দিন ধরে অস্ত্রোপচার কক্ষে (ওটি) ঝুলছে তালা। টাকার সংকটে বেসরকারি হাসপাতালে যাওয়ার কথা ভাবনাতেই আনতে পারছেন না তিনি। তাই প্রচণ্ড উৎকণ্ঠা নিয়ে দিনে দু’বার ঘুরে যান অস্ত্রোপচার ঘরের সামনে থেকে বন্ধ দুয়ার খোলা দেখার আশায়। তবে প্রতিদিন ফেরেন নিরাশ হয়ে। নিরুপায় লাকী এখন প্রতিনিয়ত জীবন-মৃত্যুর যুদ্ধে আছেন।
গোপালগঞ্জ থেকে একই সমস্যা নিয়ে এ হাসপাতালে ছুটে আসেন মুরাদ হোসেন। শারীরিক অবস্থা জটিল হওয়ায় তাঁকে চার দিন ধরে রাখা হয়েছে হাসপাতালটির করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ)। সেই ইউনিটের সব কটি এসি বিকল দুই মাস। বৈদ্যুতিক পাখার যে বাতাস তা মুরাদের শরীর পর্যন্ত পৌঁছে না। বদ্ধ কক্ষে তাঁর দম বন্ধ হওয়ার মতো অবস্থা।
নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের (আইসিইউ) শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র (এসি) বিকল হওয়ায় টানা ১২ দিন অস্ত্রোপচার কক্ষ বন্ধের ঘটনা খোদ রাজধানীতেই, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে। শুধু আইসিইউ নয়, সিসিইউ কক্ষের এসিও চলে না। দায়িত্বরত কর্মকর্তারা একাধিকবার হাসপাতালটির পরিচালকের কাছে এ ব্যাপারে চিঠি দিয়েও লাভ হয়নি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং এসির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা গণপূর্ত অধিদপ্তরের (পিডব্লিউডি) মাঝে সমন্বয়ের অভাবে চলমান অচলাবস্থা আরও দীর্ঘায়িত হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীর অবস্থা দ্রুত অবনতি হতে থাকে। এদের ৮০ শতাংশেরই লাগে সিসিইউ সুবিধা। রোগীর শরীরে যাতে ঘাম না আসে, এ জন্য তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজন হয়। এখন তীব্র গরমে অনেকের শারীরিক অবস্থার অবনতি হচ্ছে। তবে এসি বিকল থাকায় রোগীদের পড়তে হচ্ছে ভোগান্তিতে।
হাসপাতালের কার্ডিয়াক সার্জারি বিভাগের আইসিইউ ইউনিটের এসি দিয়ে পানি পড়ে অনেক অস্ত্রোপচার হওয়া রোগীর সংক্রমণ বাড়তে থাকে। গত ১৮ এপ্রিল এক রোগীর সংক্রমণ বাড়লে তাঁকে দ্রুত অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়। এর পর তালা পড়ে ২৯ শয্যার আইসিইউ ইউনিটে। সব শেষ এ ইউনিটে হৃদরোগে আক্রান্ত মরিয়ম বেগমের অস্ত্রোপচার করা হয়েছিল।