সদাচরণ রোজার সওয়াবকে পূর্ণ করে
আদব আরবি শব্দ। বাংলাতেও এ শব্দের ব্যবহার বহুল। আদব শব্দের অর্থ হলো— বিনয়, নম্রতা, ভদ্রতা, সভ্যতা, নৈতিকতা, মানবিকতা, শোভনতা ও শিষ্টাচার। আর আদব-কায়দা মানে ভদ্র সমাজের রীতি-পদ্ধতি ও ভদ্র ব্যবহার। অন্যভাবে বলা যায়, আদব-কায়দা মানে কাঙ্ক্ষিত শিক্ষা, সভ্যতা ও মার্জিত সংস্কৃতির দ্বারা আত্মগঠনের অনুশীলন করা। আর রমজান মাস হলো এমন অনুশীলনের সর্বোত্তম সময়।
রোজা রেখে সকলের সঙ্গে আদব রক্ষা করা অর্থাৎ বিনয়, নম্র ও ভদ্র আচরণ করা অপরিহার্য। অন্যথায় রোজার হক আদায় হবে না। রোজা হবে সওয়াবহীন। রোজা রেখে নৈতিকতার চর্চা করতে হবে। নৈতিক অবক্ষয় রোধ করার জন্যই রোজার বিধান দেয়া হয়েছে। রোজার সওয়াব পুরোপুরি লাভ করার জন্য সকলের ভিতর মানবিক বোধ জাগ্রত থাকতে হবে। ছোট বড় সকলের সঙ্গেই করতে হবে সদাচরণ।
সদাচরণ হলো, সকলের সঙ্গে ভালোভাবে কথা বলা, বড়দেরকে শ্রদ্ধা করা, ছোটদেরকে স্নেহ করা, হাসিমুখে কুশলাদি বিনিময় করা, কর্কশ ভাষায় কথা না বলা, ঝগড়া-ফাসাদে লিপ্ত না হওয়া, ধমক বা রাগের সুরে কথা না বলা, পরনিন্দা না করা, অপমান-অপদস্ত না করা।
যারা সদাচরণের অধিকারী, স্বভাবে নম্র-ভদ্র এবং কোমলতায় নিজেদের সৌন্দর্য মণ্ডিত করেছে তাদের জন্য জহান্নামের আগুনকে হারাম ঘোষণা করা হয়েছে। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসুল (সা.) বলেছেন, আমি কি তোমাদেরকে সে লোকের কথা বলে দেব না? যার উপর জাহান্নামের আগুন হারাম হবে, যাকে জাহান্নামের আগুন পরিত্যাগ করবে। সে ঐ লোক, যার মেজাজ নরম, স্বভাব কোমল এবং আচরণ নম্র। মিশকাত ৫০৮৪
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত। রাসুল (সা.) কে জিজ্ঞাসা করা হলো, কোন আমলের কারণে মানুষ বেশি জান্নাতে যাবে? তিনি বললেন, আল্লাহভীতি ও সুন্দর আচরণ। তিরমিজি ২০০৩
গৃহকর্মীদের নির্যাতন করা শিষ্টাচার বহির্ভূত কাজ। এটি খুবই জঘন্য একটি স্বভাব। সংবাদ মাধ্যমে প্রায়শ গৃহকর্মীদের নির্যাতনের খবর সম্পর্কে জানা যায়। কেউ যদি রোজা রেখে রাগান্বিত হয়ে গৃহকর্মীর সঙ্গে খারাপ আচরণ করে, গৃহকর্মীকে নির্যাতন করে, মন্দ কথা বলে, গালি দেয় তাহলে তার রোজা অযথা হয়ে যাবে। রোজার কোন সওয়াবই হবে না। কেননা হাদিসে এমন কাজকে জাহান্নামে যাওয়ার কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। তাই অধীনস্ত কর্মচারী ও গৃহকর্মীদের সঙ্গে মার্জিত ও কোমল আচরণ করা বাঞ্ছনীয়।
গৃহকর্তা যেমন আচরণ আশা করে গৃহকর্মী থেকে ঠিক তেমন আচরণ গৃহকর্মীর সঙ্গেও গৃহকর্তার করা চাই। এটাই নবীর শিক্ষা। রমজান মাসে অধীনস্তদের সঙ্গে এমন আচরণ করতে পারলেই রোজা হবে যথাযথ সওয়বসম্মত।
হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসুল (সা.) বলেছেন, এরা (অধীনস্ত কর্মচারীরা) তোমাদের ভাই, এদেরকে আল্লাহ তায়ালা তোমাদের অধীনস্থ করেছেন। সুতরাং যে ব্যক্তির এরূপ ভাই (কাজের লোক) তার অধীনে আছে, সে যেন তার খাদ্য হতে তাকে খেতে দেয় এবং তার পোশাক-পরিচ্ছদ হতে তাকে পরতে দেয়। সে এরূপ কাজের বোঝা যেন তার উপর না চাপায় যা করতে সে সামর্থ রাখে না। তার উপর সাধ্যাতীত কোন কাজের বোঝা চাপিয়ে দিলে মালিক যেন তাকে সহযোগিতা করে। তিরমিজি ১৯৪৫
রাসুল (সা.) আরো বলেন, অধীনস্তদের সাথে দুর্ব্যবহারকারী জান্নাতে যেতে পারবে না। তিরমিজি ১৯৪৬