ইচ্ছাকৃত খেলাপি রোধে দ্রুত মামলা নিষ্পত্তির বিকল্প নেই
প্রকৃত খেলাপি ঋণের ভারে দুর্বল হয়ে পড়েছে দেশের ব্যাংক খাত। যদিও তা দৃশ্যমান নয়। কারণ, দৃশ্যমান খেলাপির আড়ালে বড় অঙ্কের খেলাপি ঋণ দীর্ঘদিন আটকে আছে আদালতে। যার মূলে রয়েছে মামলার দীর্ঘসূত্রতা। তাই অর্থ উদ্ধারে মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির তাগিদ দিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
ব্যাংক নির্বাহীদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠেয় আজকের ব্যাংকার্স সভার আলোচ্যসূচিতেও বিষয়টি স্থান পেয়েছে। চলতি বছরের প্রথম সভায় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের সভাপতিত্বে তফশিলভুক্ত ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ বিষয়ে মতামত দেওয়ার কথা রয়েছে।
এছাড়া সভায় সব ব্যাংকে বাংলা কিউআর কোড চালু, নতুন মুদ্রানীতি, ব্যাংক ঋণের সুদহার এবং ব্যাংকারদের জন্য হাসপাতাল নির্মাণসহ বিবিধ বিষয়ে আলোচনা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক বলেন, ‘চলতি বছরের প্রথম ব্যাংকার্স সভা রোববার অনুষ্ঠিত হবে। সভায় মুদ্রানীতি, খেলাপি ঋণ আদায় প্রক্রিয়াসহ বিবিধ বিষয়ে আলোচনা হবে।’
ব্যাংকার্স সভার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে যুগান্তরকে জানান, ঋণখেলাপির অঙ্ক ক্রমান্বয়ে আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যাচ্ছে। খেলাপি ঋণ কমাতে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলসহ দেশের অভ্যন্তরেও নানা চাপ রয়েছে। কিন্তু তা কমানো যাচ্ছে না। আর সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলোর সঙ্গে আলোচনায় উঠে এসেছে, অর্থঋণ আদালতে মামলার দীর্ঘসূত্রতার সুযোগ নিয়ে অনেক গ্রাহক ইচ্ছাকৃত খেলাপি বনে যাচ্ছেন। এতে ঋণখেলাপি লাগামছাড়া হয়ে পড়েছে। এই খেলাপি কমাতে আদালতের সংখ্যা বাড়ানো এবং মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির বিকল্প নেই।
একটি ব্যাংকের এমডি যুগান্তরকে বলেন, অর্থঋণ আদালতে এমনও মামলা আছে, যার বয়স ২০ বছর ছাড়িয়ে গেছে। কিন্তু মামলা নিষ্পত্তির কোনো লক্ষণ নেই। এভাবে আদালতে মামলার পাহাড় জমছে। কয়েকটি কারণে মামলার স্তূপ। আদালত সংকটের কারণে কিছু মামলা বছরের পর বছর ঝুলে আছে। আবার কিছু আছে ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি। যারা বারবার স্থগিতাদেশ নিয়ে মামলা প্রক্রিয়াকে দীর্ঘস্থায়ী করে। এছাড়া কিছু দুর্নীতিবাজ ব্যাংকারও আছেন, যারা অসাধু ব্যবসায়ীদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে চলেন। ফলে টাকা আদায়ে করা মামলা নিষ্পত্তিতে কোনো অগ্রগতি হয় না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০০৯ সালে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের অঙ্ক ছিল ২২ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা, যা ২০২২ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকায়। আর ২০০৩ সালে অর্থঋণ আদালত গঠনের পর থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত অর্থঋণ আদালতে দায়ের করা মামলার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ২২ হাজার। এসব মামলায় আটকা ২ লাখ ৪৯ হাজার কোটি টাকা। পাশাপাশি অর্থঋণ আদালতে এখন পর্যন্ত নিষ্পত্তি মামলা সংখ্যা ১ লাখ ৫০ হাজার এবং এসব মামলায় নিষ্পত্তি অর্থের অঙ্ক ৮২ হাজার কোটি টাকা হলেও প্রকৃত আদায় ২১ হাজার কোটি টাকা। তবে অর্থঋণ আদালতে ডিসেম্বর পর্যন্ত বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ৭২ হাজার এবং আটকা অর্থের অঙ্ক ১ লাখ ৬৬ হাজার কোটি টাকা।