নারীদের মধ্যে যে কারণে বাড়ছে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি
বলিউড অভিনেত্রী সুস্মিতা সেন সম্প্রতি হৃদরোগে আক্রান্ত হন। তার প্রধান ধমনীতে ৯৫ শতাংশ ব্লকেজ ছিল। সুস্মিতা নিজেই তার একটি ইনস্টাগ্রাম ভিডিওতে এই কথা জানিয়েছেন। হঠাৎ করেই হার্ট অ্যাটাক হয় তার।
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, সুস্মিতা ভাগ্যবান যে তিনি এত বড় হার্ট অ্যাটাক থেকে বেঁচে গেছেন। না হলে এত বড় ব্লকেজ সহ হার্ট অ্যাটাকে তিনি মৃত্যুর ঝুঁকি ছিল।
তবে তিনি অনেকটাই সুস্থ ও চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধায়নে আছেন। সুস্থ হওয়ার পর তিনি চিকিৎসক ও তার ভক্তদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
এখানে অনেক প্রশ্ন উঠেছে, যা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় তুমুল আলোচনা হয়েছিল। প্রথমত, সুস্মিতা তার ফিটনেসের পুরো যত্ন নেন, তারপর কীভাবে তিনি হার্ট অ্যাটাক করলেন?
সুস্মিতার কার্ডিওলজিস্ট ডা. রাজীব ভাগবত এ বিষয়ে জানান, হার্ট অ্যাটাকের ঘটনা এখন শুধু পুরুষ নয়, নারীদের মধ্যেও দ্রুত বাড়ছে। আজকের নারীরা অতীতের তুলনায় অনেক বেশি চ্যালেঞ্জ ও দায়িত্বের সম্মুখীন।
তারা অফিস ও বাড়িতে উভয়ই কাজ পরিচালনা করছেন। তাদের খাদ্যাভাসে পরিবর্তন এসেছে। এতে তাদের মানসিক চাপ বেড়েছে। এমনকি অনিদ্রাতেও ভোগেন অনেক নারী। সব মিলিয়ে নারীদের মধ্যে বাড়ছে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি।
হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকির অন্যান্য কারণ
এ বিষয়ে চিকিৎসক জানান, মানসিক চাপ ছাড়াও হার্ট অ্যাটাকের অন্যান্য ঝুঁকির কারণ হলো ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ কোলেস্টেরল ও তামাক ব্যবহার।
এগুলো ছাড়াও পরিবারে কোনো হৃদরোগে আক্রান্ত রোগী থাকলে বংশগত কারণেও হার্ট অ্যাটাক বা হৃদরোগ হওয়া ঝুঁকি থাকে।
হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমাতেম যেসব পদক্ষেপ নিতে হবে-
শারীরিক কার্যকলাপ গুরুত্বপূর্ণ
বিশেষজ্ঞদের মতে, একটি সক্রিয় জীবনধারার মাধ্যমে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমানো যায়। একই সঙ্গে কমে চাপ ও বিষণ্নতা। সুস্মিতা শারীরিক কার্যকলাপে জড়িত থাকার কারণেই এতো বড় হার্ট অ্যাটাক থেকেও ফিরে এসেছেন।
শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকা ও জীবনধারায় পরিবর্তন আনা কতটা জরুরি, এই শিক্ষা সবারই শেখা উচিত সুস্মিতার কাছ থেকে।
চিকিৎসক জানাচ্ছেন, আপনার প্রতিদিন ব্যায়াম করার প্রয়োজন নেই, সপ্তাহে মাত্র ৩-৪ দিন শরীরচর্চা করাই যথেষ্ট হতে পারে। ব্যায়ামের চাপ থেকে পুনরুদ্ধারের জন্য অবশ্যই আপনার শরীরকে সময় দিতে হবে।
বিশ্রাম ও পর্যাপ্ত ঘুম ছাড়া একটানা ব্যায়াম করলে হরমোনের মাত্রার ভারসাম্যহীনতা হতে পারে। ফলে শারীরিক বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়।
৭-৮ ঘণ্টা ঘুম প্রয়োজন
বিশেষজ্ঞদের মতে, অনেকেই বেশি রাত করে অর্থাৎ ২-৩টার দিকে ঘুমান আবার সকাল ৬টায় জিমে যান বা জগিং করেন। অনেক যুবক এটা করছে।
এমন অনেক ঘটনা ঘটেছে যে তারা জিমে গিয়েও মারা গেছেন, আবার জগিং করতে গিয়ে মাথা ঘুরে পড়ে গিয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন।
এ কারণে রাতে ৭-৮ ঘণ্টা ঘুম প্রয়োজন। মাত্র ২-৩ ঘণ্টা ঘুম যথেষ্ট নয়। জিমিং একটি ফ্যাশন নয়, এটি একটি স্বাস্থ্যকর কার্যকলাপ হওয়া উচিত। অত্যধিক জিম করা আপনার স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হতে পারে।
সঠিক সময়ে হাসপাতালে যাওয়া জরুরি
চিকিৎক জানাচ্ছেন, কারো হার্ট অ্যাটাক হলে এমন হাসপাতালে যেতে হবে যেখানে এনজিওগ্রাফি ও এনজিওপ্লাস্টির ভালো ব্যবস্থা আছে।
সুস্মিতা কি কোনো সতর্কবাণী বা লক্ষণ উপেক্ষা করেছিলেন? এ বিষয়ে ডাক্তার বলেছেন, সুস্মিতা ভাগ্যবান, তিনি সঠিক সময়ে ও সঠিক হাসপাতালে এসেছেন।
ওজন, রক্তে শর্করা ও কোলেস্টেরলের মাত্রার যত্ন নিন
চিকিৎসক আরও জানিয়েছেন, হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমাতে হলে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। অনেক মানুষই জানেন না যে, তারা ডায়াবেটিক কিংবা তাদের শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি। ফলে অজান্তেই তাদের মধ্যে বাড়ছে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি।
বর্তমানে বিশ্বের সব দেশেই রোগ নির্ণয়ের উন্নতি ঘটেছে। তবে শুধু রোগ নির্ণয় নয়, সচেতনতাও জরুরি। না হলে অকালে ঝরে যেতে পারে অনেক প্রাণ।