উৎকণ্ঠায় সাধারণ মানুষ, কঠোর সরকার
রমজান আসন্ন। হাতে সময় এক মাসও নেই। তাই রোজাকে সামনে রেখে ভোক্তাদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার শেষ নেই। এমনিতে রোজা আসার আগেই নিত্যপণ্য সব জিনিসপত্রের দাম আকাশছোঁয়া।
চাল, ডাল, মাছ, মাংসসহ অনেক পণ্যের দাম চড়া। সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে। তবে সরকার দাবি করছে, রোজার সময় বেশি প্রয়োজনীয় ছয়টি পণ্যের তেমন কোনো সংকট হবে না। কিছু পণ্য ইতোমধ্যে আমদানি হয়ে বাজারে ঢুকছে। বাকি পণ্য আসার পথে। এছাড়া গতবারের তুলনায় এবার আমদানির পরিমাণও বেশি।
এদিকে বিশেষজ্ঞদের অনেকে বলছেন ভিন্নকথা। তারা মনে করেন, প্রতিবারই সরকারের তরফ থেকে এমন আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়। কিন্তু রোজা শুরু হলে দেখা যায় ভিন্নচিত্র।
এমনিতে এবার রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্বজুড়ে মন্দা পরিস্থিতি বিরাজ করছে। বিশেষ করে ডলারের উচ্চমূল্যসহ ডলার সংকটের কারণে অনেক ব্যবসায়ী সময়মতো এলসি খুলতে পারেননি বলে অভিযোগ রয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে তাদের আশঙ্কা, ব্যবসায়ীদের কারসাজির কারণে তেল, চিনি ও ছোলাসহ কিছু পণ্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির পাঁয়তারা হতে পারে। সেক্ষেত্রে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হলেও প্রভাবশালীরা সব সময় থাকে ধরাছোঁয়ার বাইরে।
বিশেষজ্ঞদের এমন আশঙ্কার ইঙ্গিত মিলেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামানের মন্তব্যে। সোমবার তিনি যুগান্তরকে বলেন, ‘বাণিজ্য মন্ত্রণালয়সহ সবাই মিলে বাজার নিয়ন্ত্রণে কাজ করছি। কিন্তু এর ফলাফল পাওয়া যাচ্ছে না। এখানে পণ্যের ঘাটতি নেই। শুধু ঘাটতি ব্যবস্থাপনার।’
এদিকে বাণিজ্য সচিব (সিনিয়র) তপন কান্তি ঘোষ জানান, রোজায় পণ্যের পর্যাপ্ত মজুত আছে। সংকটের কোনো আশঙ্কা নেই। তবে মুক্তবাজার অর্থনীতিরও একটা নিয়ম-কানুন আছে। ফলে যারা সে নিয়ম-কানুন মানতে চাইবেন না তাদের বিরুদ্ধে সরকার ব্যবস্থা নেবে।
সংশ্লিষ্টদের মতে, প্রতিবছর কোনো অজুহাত ছাড়াই রোজা এলে বাজার ঘিরে নানা ধরনের অপতৎপরতা শুরু করেন একশ্রেণির ব্যবসায়ী। এবার রোজার বাজারকে ঘিরে কয়েকটি সংকট একসঙ্গে কড়া নাড়ছে। ফলে সরকারের ভেতরে এক ধরনের অস্থিরতা কাজ করছে।
যদিও পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকার ইতোমধ্যে কঠোর অবস্থান নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। মনিটরিংয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থাকে। পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের সংগঠন ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় যৌথভাবে মনিটরিং করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
অপরদিকে ভোগ্যপণ্যের কয়েকজন বড় রিফাইনারিকে ডেকে তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রোজার বাজারে পণ্য সরবরাহ ঠিক রাখার নির্দেশ দেন তিনি।