ঝুঁকি নিয়ে যেভাবে ৪৫০ কোটি টাকা সাশ্রয় করল এমজিআই
করোনা মহামারির শুরুতে ২০২০ সালের মাঝামাঝি থেকে বিশ্বজুড়ে জাহাজের দাম পড়তে থাকে। কমে যায় সমুদ্রপথে পণ্য পরিবহনের ভাড়াও। নতুন বিনিয়োগ থেকে পিছু হটেন বিশ্বের বাঘা বাঘা বিনিয়োগকারী। নতুন জাহাজ নির্মাণের ব্যয়ও অর্ধেক কমে যায়। কারণ, জাহাজের ভাড়া দিয়ে তেলের খরচও উঠত না তখন। এমন এক অনিশ্চিত সময়ে ঝুঁকি নিয়েছিলেন বাংলাদেশের মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ বা এমজিআইয়ের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল।
করোনার উৎপত্তিস্থল চীনের একটি কারখানায় একসঙ্গে চারটি বিশাল জাহাজ তৈরির ক্রয়াদেশ দেন মোস্তফা কামাল—প্রতিটি ২০০ মিটার লম্বা ও ৬৬ হাজার টন পণ্য পরিবহনে সক্ষম। নির্মাণ শেষে আড়াই বছর পর এই চার জাহাজ এখন হাতে পেয়েছে এমজিআই। তখন সেই পড়তি বাজারে চারটি জাহাজের প্রতিটির জন্য বিনিয়োগ করতে হয়েছে ২ কোটি ৫৫ লাখ ডলার।
জাহাজশিল্প খাতের পরামর্শক প্রতিষ্ঠানগুলোর হিসাবে, এখন একই রকম নতুন জাহাজ বানাতে গুনতে হবে ৩ কোটি ৬০ লাখ ডলার। অর্থাৎ প্রতি জাহাজে এক কোটি পাঁচ লাখ ডলারের বেশি সাশ্রয় করেছে এমজিআই। কৌশলী বিনিয়োগের মাধ্যমে চারটি জাহাজ থেকে অন্তত ৪ কোটি ২০ লাখ ডলার সাশ্রয় হয়েছে দেশেরও। বিদেশি মুদ্রার এই আকালের যুগে যা একেবারে কম নয়। বর্তমান বিনিময় হার হিসেবে তা প্রায় ৪৫০ কোটি টাকার সমান।
বর্তমানে দেখা যাচ্ছে, শুধু নতুন জাহাজ নয়, পুরোনো জাহাজও এর চেয়ে বেশি দরে বেচাকেনা হচ্ছে। লন্ডনভিত্তিক শিপিং পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ভ্যাসেলভ্যালুর প্রতিবেদন অনুযায়ী, দুই সপ্তাহ আগে তিন বছরের পুরোনো ৬৪ হাজার টন পণ্য পরিবহনের উপযোগী এমভি স্প্রিংফিল্ড নামের একটি জাহাজ বিক্রি হয়েছে তিন কোটি সাত লাখ ডলারে। বর্তমানে বাংলাদেশের বহরে থাকা কয়েকটি পুরোনো জাহাজের দামও নতুন এই চার জাহাজের চেয়ে বেশি।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজ বা এমজিআইয়ের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল আজ শনিবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘করোনার সময় এই বিনিয়োগ অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। কিন্তু অনলাইনে অনুষ্ঠিত এক সভায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কথায় সাহস পেয়েছিলাম। তিনি বলেছিলেন, দুর্যোগের মধ্যেও বিনিয়োগের সুযোগ থাকে, দূরদর্শিতা দিয়ে তা খুঁজতে হবে। তখন মনে হলো, ঝুঁকি নিয়েই দেখি। সে সময়ের সিদ্ধান্ত যে সঠিক ছিল, আড়াই বছর পর আজ বাজারের চিত্র তা–ই বলছে।’