৭ মাত্রার ভূমিকম্পে কী ঘটতে পারে ঢাকায়?
তুরস্ক ও সিরিয়ায় ভূমিকম্পের ভয়াবহতা বাংলাদেশেও তৈরি করেছে শঙ্কা। এরকম শক্তিশালী ভূমিকম্প যদি ঘনবসতিপূর্ণ ঢাকা শহরে অনুভূত হয় তাহলে কী হতে পারে তা নিয়ে চলছে নানা রকম অনুমান-জল্পনাকল্পনা। ভূমিকম্প সহনশীল ভবন কতগুলো আছে, ভূমিকম্পের পর উদ্ধার অভিযান কতটুকু ফলপ্রসূ হবে, উদ্ধারকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা-দক্ষতা কতটুকু এ নিয়ে চলছে আলোচনা।
যদি রিখটার স্কেলে ৭ বা ৮ মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হয় তাহলে রাজধানীর অধিকাংশ ভবন ধসে পড়বে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এছাড়া উদ্ধার তৎপরতা চালানোর দক্ষতাও তেমনভাবে গড়ে ওঠেনি বলে অনেকের অভিমত। তবে ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তারা বলছেন, ভূমিকম্পসহ যেকোনও ধরনের দুর্যোগ পরবর্তী উদ্ধার অভিযানে প্রস্তুত তারা।
পূর্বাভাস কি আছে?
২০১৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগ এবং কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির ল্যামন্ট-ডোহার্টি আর্থ অবজারভেটরি সেন্টার পরিচালিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভূমিকম্পের ঝুঁকি রয়েছে বাংলাদেশেও। মাটির নিচে ভারতীয়, ইউরেশিয়ান ও মিয়ানমার প্লেটের সংযোগস্থলের ওপর বাংলাদেশের অবস্থান। এ কারণেই এই ঝুঁকি।
উল্লেখ্য, মাটির নিচে পাথর ও অন্যান্য খনিজের বিশাল আকৃতির (শত বা হাজার কিলোমিটার দীর্ঘ) খণ্ডগুলোকে প্লেট বলে। অনমনীয় এই প্লেটগুলো চলমান অবস্থায় থাকে। চলতে চলতে একটির সঙ্গে অন্যটির ঘর্ষণ বা সংঘর্ষের ফলে অনেক সময় ফাটল তৈরি হয়। মাটির নিচের ওই ঘর্ষণ বা ফাটল থেকে ভূপৃষ্ঠে ভূমিকম্প অনুভূত হয়।
২০১৬ সালের ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ইন্ডিয়ান, ইউরেশিয়ান ও মিয়ানমার টেকটনিক প্লেটের মাঝে বাংলাদেশের অবস্থান। এই প্লেট কয়েকশ’ বছর ধরে শক্তি সঞ্চয় করছে এবং গত একশ’ বছরে বাংলাদেশে বা আশপাশের অঞ্চলে বড় কোনও ভূমিকম্প হয়নি। তাই যেকোনও সময় হতে পারে ভূমিকম্প। যার মাত্রা হতে পারে রিখটার স্কেলে ৮-এর কাছাকাছি। ভারত-বার্মা প্লেটের ওপরে সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের অবস্থান হওয়ায় সেখানে ঝুঁকির মাত্রা বেশি। ধ্বংসস্তূপে পরিণত হতে পারে সেসব এলাকা।
এদিকে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) গবেষকরা বলছেন, কোনও এলাকায় সাধারণত একশ বা দেড়শ’ বছর পর পর ৭ বা তার বেশি মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হতে পারে। সেই হিসাবে যেকোনও সময় ৭ মাত্রার ভূমিকম্প বাংলাদেশে হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। তারা জানান, ৮ মাত্রার ভূমিকম্প অনুভূত হওয়ার শঙ্কা সাধারণত থাকে আড়াইশ’ বছর পর পর।