ডিজিটাল জগতে বাংলা ভাষার ব্যবহার বাড়াতে আরও পদক্ষেপ নিতে হবে
এই আধুনিক প্রযুক্তির যুগে বাংলা ভাষাকেও আধুনিক প্রযুক্তিতে সমৃদ্ধ হতে হবে। নইলে বাংলাদেশ বিশ্বসভ্যতার অগ্রগতির যুগে পিছিয়ে যাবে। একুশে ফেব্রুয়ারিই পারে বাংলা ভাষাকে এগিয়ে যাওয়ার সেই উদ্দীপনা দিতে। ভাষাকে টিকিয়ে রাখতে হলে ভাষাবিদদের পাশাপাশি রাষ্ট্র এবং প্রযুক্তিবিদদেরও সক্রিয় হতে হবে। মায়ের ভাষায় প্রযুক্তি ব্যবহার করেই দেশকে এগিয়ে নিতে হবে। আমাদের ইতিবাচক দিক হচ্ছে প্রযুক্তিমনস্ক সরকার ক্ষমতায়। প্রযুক্তির ব্যবহার করে বাংলা ভাষায় লেখাপড়া ও চর্চা এবং ভাষাকে টেকসই করায় বিশেষজ্ঞ জ্ঞান থেকে উৎসারিত সরকারি কিছু উদ্যোগ নিতে হবে।
ডিজিটাল জগতে বাংলা ভাষার ব্যবহার বাড়াতে কাজ করতে হবে। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের বাংলা ভাষা সমৃদ্ধকরণ প্রকল্পের আওতায় সফটওয়্যার ও টুলসের ব্যবহার শুরু হলে তা চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের যুগে বাংলা ভাষাকে বৈশ্বিকীকরণের সুযোগ সৃষ্টি করবে। ডিজিটাল ডিভাইসে আরও ভালোভাবে এবং সহজে বাংলা ভাষায় লেখাপড়া ও অনুবাদ সহজ হবে।
যেসব দেশ তথ্যপ্রযুক্তি উদ্ভাবন ও প্রয়োগে এগিয়ে আছে, তারা সবাই প্রযুক্তিতে মাতৃভাষার ব্যবহার করছে। চীন আমাদের সামনে বড় উদাহরণ হতে পারে। চীনা ভাষার অক্ষরগুলো অত্যন্ত জটিল, কিন্তু তারা থেমে থাকেনি। প্রযুক্তিতে মাতৃভাষা ব্যবহারের সুযোগ করে দেওয়ায় বর্তমানে চীনে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বহু আগেই ৫০ কোটি ছাড়িয়েছে। তবে আমাদের দেশে প্রযুক্তিতে বাংলা ভাষার চর্চা হলেও এ মুহূর্তে বাংলায় ভালো কনটেন্টের অভাব রয়েছে। তাই দেশের ১৮ কোটি ৬০ লাখরে বেশি মোবাইল ফোন, ১৩ কোটিরও বেশি ইন্টারনেট ব্যবহারকারী এবং ৫ কোটির বেশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীর কথা মাথায় রেখে মাতৃভাষায় ভালো ভালো কনটেন্ট ও মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন তৈরি হবে। আর তা করা হলে শুধু অর্থনৈতিক কার্যক্রম ও মানুষে মানুষে যোগাযোগ বৃদ্ধি, জ্ঞানার্জন এবং তথ্য ও সেবা পাওয়া নিশ্চিত করবে না, মাতৃভাষাকে বাঙালির মাঝে চিরঞ্জীব করতে সহায়তা করবে।
ডিজিটাল দুনিয়ায় বাংলা লিপি ব্যবহারের সংকট ও সমাধান নিয়ে অংশীজনের উপস্থিতিতে বিভিন্ন সংলাপ ও নীতি সংলাপ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আলোচনায় বেরিয়ে আসছে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের প্রাযুক্তিক সমস্যার পেছনে ইউনিকোড কনসোর্টিয়ামরে ভূমিকা রয়েছে। এই কনসোর্টিয়াম আমাদের ভাষায় এমন জটিল অবস্থার সৃষ্টি করে রেখেছে এবং এটি একটি স্বতন্ত্র ভাষা হিসেবে গণ্য না করে তারা আমাদের বাংলা ভাষাকে দেবনাগড়ির অনুসারী করে রেখেছে। এতে আমাদের প্রচণ্ডরকম ক্ষতি হয়েছে এবং বাঙালিদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছে। এই জন্যই এখনো আমাদের নোক্তা নিয়ে যুদ্ধ করে বেড়াতে হয়। অথচ বাংলা বর্ণে কোনো নোক্তা নেই। ইউনিকোড যদি বাংলাকে বাংলার মতো দেখে এই সমস্যাগুলো সমাধান করে ফেলতো তাহলে যে সমস্যাগুলো এখন ফেস করতে হচ্ছে তা করতে হতো না।