বিশ্বকাপের পর মেসির ‘মনের বাতায়ন খোলা’ প্রথম সাক্ষাৎকার
যেভাবে সন্তান হওয়ার পর নার্সের বাড়িয়ে দেওয়া হাত থেকে জীবনের শ্রেষ্ঠ উপহার তুলে নেয় কোনো গর্বিত বাবা, আলতো ছোঁয়ায় ভালোবাসার দাগ কেটে দেয় সে সন্তানের মুখে, ঠিক সেভাবেই সেদিন বিশ্বকাপ ট্রফিটিতে চুমু খেয়েছিলেন লিওনেল মেসি। জীবনের পূর্ণতা পেয়েছিলেন, স্বাদ বুঝেছিলেন সেদিন। বিশ্বকাপের প্রায় দেড় মাস পরও সেই ঘোর লেগে আছে তাঁর হৃদয়ে, হয়তো আজীবনই থাকবে তা।
এমনিতে লাজুক মেসি মিডিয়ার সামনে মনের দরজা সেভাবে কখনোই খোলেননি। তবে স্বদেশি সাংবাদিক অ্যান্ডি কুজনেতসফকে সেই সুযোগ দিয়েছিলেন। প্যারিসে নিজের বাড়িতে বসে আর্জেন্টাইন রেডিও 'উরবানা প্লেই'র ওই সাংবাদিকের কাছেই বিশ্বকাপ ফাইনালের রাতের আগে-পরের অনেক মুহূর্ত নিয়ে কথা বলেছেন মেসি। বলেছেন কাতারের সেই দিনগুলো মিস করে তাঁর পরিবার। যেখানে তিনি জানিয়েছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমটি তিনি নিজেই চালান, নিজেই পোস্ট করেন, নিজেই রিপ্লাই দেন। সমকাল পাঠকদের জন্য বিশ্বকাপ-উত্তর মেসির এই প্রথম সাক্ষাৎকার তুলে দেওয়া হলো।
বিশ্বকাপের সবচেয়ে কঠিন মুহূর্ত
সৌদি আরবের কাছে ম্যাচটি হারার মুহূর্তটিই সবচেয়ে কঠিন ছিল। তবে বিশ্বকাপে আমাদের জন্য সবচেয়ে কঠিন ম্যাচ ছিল মেক্সিকোর বিপক্ষে। কারণ ওই ম্যাচটিতে আমরা এমন একটি জায়গায় দাঁড়িয়েছিলাম, সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়াতেই হতো। তাছাড়া ওই ম্যাচটিতেই আমরা সবচেয়ে বাজে খেলেছিলাম। জিততেই হবে- এমন একটা পরিস্থিতিতে এসে ভিন্নভাবে খেলতে হয়। তবে আমার বিশ্বাস ছিল, আমরা ম্যাচটি জিতবই- এই বিশ্বাসটাই পুরো দলকে তাতিয়ে দিয়েছিল। আমরা যদি ম্যাচটি না জিততে পারতাম তাহলে হয়তো গ্রুপ পর্বের সমীকরণটাই অন্যরকম হতো। যা কিনা পরিস্থিতি আরও কঠিন করে তুলত।
কোচ স্কালোনি এবং তাঁর কোচিং স্টাফ
কোচিং স্টাফদের কাজ ছিল দেখার মতো। তাঁরা আমাদের দলের শক্তি-দুর্বলতা সম্পর্কে ভালোভাবেই জানতেন। তাছাড়া সেখানে কয়েকজন সাবেক ফুটবলার ছিলেন, তাঁরা তাঁদের বিশ্বকাপ অভিজ্ঞতা থেকে আমাদের অনুপ্রাণিত করতেন। তাঁরা বোঝাতেন কীভাবে চাপ সামলাতে হয়। বিশ্বকাপের প্রতিটি ম্যাচে আমরা প্রতিপক্ষের চেয়ে ভালো প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে নেমেছিলাম। ভিন্ন ভিন্ন পরিকল্পনা ও চিন্তা করে তাঁরা ম্যাচের কৌশল সাজাতেন। প্রথম ম্যাচের হার পেছনে ফেলে সাতটি ম্যাচে স্কালোনি নির্ভুলভাবে তাঁর কৌশল সাজিয়েছিলেন।
ঈশ্বরের আশীর্বাদ
আমি আগেও একবার বলেছিলাম, মনে হয় সেটা ২০১৪ বিশ্বকাপের আগে আগে। বলেছিলাম, ঈশ্বর আমাকে বিশ্বকাপ দেবে। তারপর ব্রাজিলে আমরা বিশ্বকাপ জয়ের খুব কাছাকাছি গিয়েছিলাম। আমার তখন মনে হয়েছিল, ঈশ্বর আমার জন্য ট্রফিটি ধরে রেখেছেন। মনে হয়েছিল, ঈশ্বর সেই মুহূর্তের জন্যই আমাকে অপেক্ষায় রেখেছেন। কেন তা মনে হয়েছিল তা বুঝিয়ে বলতে পারব না। তবে এখনকার চেয়ে ভালো সময় বোধ হয় আর হতে পারে না। যেমন কোপা আমেরিকা জয়টাও সেরা মুহূর্ত ছিল। আমি আমার জীবনের প্রতিটি দিনের জন্য ঈশ্বরকে ধন্যবাদ জানাই, জীবনে যা কিছু পেয়েছি তার সবকিছুর জন্য ধন্যবাদ জানাই। তাঁর কাছে এর চেয়ে বেশি আর কিছু চাওয়ার নেই আমার।
বিশ্বকাপ ট্রফিতে প্রথম চুম্বন
ট্রফিটা ওখানে রাখা ছিল। কিন্তু যা করতে চাচ্ছিলাম তা পারছিলাম না। ট্রফিটি যেন আমাকে ডাকছিল, বলছিল আমাকে- ‘হয়েছে, এবার কাছে এসো আর আমাকে জড়িয়ে ধরো।’ ট্রফিটির পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় আমি ট্রফিটাতে চুমু খাই, কারণ খুব ইচ্ছা করছিল।
মন্টিয়ালের নেওয়া শেষ পেনাল্টি কিকের মুহূর্তটি
ওই মুহূর্তে আসলে মনের অবস্থা কেমন ছিল তা বুঝিয়ে বলা মুশকিল। মনের মধ্যে তখন অনেক কিছু ঘুরপাক খাচ্ছিল। আমরা শেষ পর্যন্ত জিতেছি- এটা যেন বিশ্বাস হচ্ছিল না। সবাই বলছিল, সবকিছু শেষ হয়েছে। আর আমি ভাবছিলাম অবশেষে জাতীয় দলের হয়ে আমি সবকিছু জিততে পারলাম। সারাজীবন যা নিয়ে স্বপ্ন দেখেছি, ক্যারিয়ারের শেষ দিকে এসে তা পেয়েছি। ওই মুহূর্তটি নিঃসন্দেহে আমার জীবনের সেরা।
- ট্যাগ:
- খেলা
- সাক্ষাৎকার
- কাতার বিশ্বকাপ
- লিওনেল মেসি