‘কুকি-চিন’ নিয়ে আসলে কী ঘটছে
কুকি-চিন মানুষদের নিয়ে মিজোরামের রাজধানী আইজল খুব উত্তাল যাচ্ছে গত কয় দিন। মিছিল-মিটিং হচ্ছে। রাজ্য সরকার ও কেন্দ্রীয় সরকারকে স্থানীয় মিজোরা বাংলাদেশের কুকি-চিনদের উদারভাবে আশ্রয় দিতে বলছে। মিয়ানমারের পালিয়ে আসা চিনদের জন্যও তারা একই নীতি চায়। এ দাবির পেছনে রয়েছে বিস্তর ঘটনা—আর সামনে আছে সম্ভাব্য আরও কিছু অধ্যায়। প্রশ্ন উঠতে পারে, বাংলাদেশের সেসব বিষয়ে কতটা অবহিত ও সতর্ক?
মিজোরামে যখন কুকি-চিন প্রসঙ্গ
মিজোরা যাদের কুকি-চিন বলছে, বাংলাদেশে তারা হলো বম, লুসাই, পাংখোয়া ইত্যাদি। সংখ্যায় খুব কম এসব জাতিগোষ্ঠী। বান্দরবান সদর, রুমা, রোয়াংছড়ি, বাঘাইছড়ি, বিলাইছড়ি, বরকল অঞ্চলে এদের বেশি বসবাস, যা মিয়ানমারভুক্ত চিন প্রদেশ এবং ভারতভুক্ত মিজোরাম-সংলগ্ন। বান্দরবানের কাছাকাছি মিজোরামের জিলার নাম লঙ্গৎলাই। আর চিনের অংশ পালেতওয়া টাউনশিপের মাটুপি। কাছেই আরাকানের মংডু।
চার ধরনের প্রশাসনিক পরিচয় নিয়েও এ অঞ্চলে রয়েছে বহু জাতিসত্তার মানুষ। বহুকাল ধরে এ রকম জাতিসত্তাগুলোর মধ্যে নৃতাত্ত্বিক বন্ধন ঘিরে নানান ভাঙা-গড়া-সংঘাত-সংঘর্ষ ছিল এবং আছে। তার মধ্যে প্রশাসনিক হস্তক্ষেপের মিশেলও যুক্ত হয় প্রতিনিয়ত। সে রকমই এক চলতি অধ্যায়ে আইজলে এক সপ্তাহ ধরে মিজোরা বাংলাদেশের কুকি-চিনদের ব্যাপারে সমব্যথী হয়ে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ করছে। ঢাকায় সে খবর হয়তো সামান্যই এসে পৌঁছাল।
‘জো’দের পারস্পরিক বন্ধনকে বিবেচনায় রাখা দরকার
‘মি-জো’ কথার মানে ‘পাহাড়ের মানুষ’। এটা বেশ বিস্তৃত ধারণা। এতে অনেক জাতিসত্তা অন্তর্ভুক্ত। এসব জাতিসত্তা নিজেদের বলে ‘জো’। আইজলের মিজোদের বক্তব্য হলো কুকি-চিনরাও জো। সুতরাং তারা বিপদে পড়ে যদি মিজোরামে ঢুকে থাকে, তাহলে এদের তাড়ানো যাবে না। মিজোরামের এখনকার সরকার এ রকম মনোভাব সমর্থন করে। তবে সীমান্তরক্ষীরা কেন্দ্রীয় সরকার-নিয়ন্ত্রিত। ফলে সীমান্তে অন্য দেশের জোরা বাধা পাওয়ায় আইজল ক্ষুব্ধ। এর আগে অবশ্য মিয়ানমারের রাজনৈতিক সংঘাতের কারণে চিন থেকে প্রচুর জো মিজোরামে ঢুকে আছে।
যেহেতু চিন, বান্দরবান, মিজোরাম মিলে জোদের মধ্যে খ্রিষ্টধর্মাবলম্বী বেশি, সে কারণে আইজলের রাস্তায় দাঁড়ানো মানুষদের মধ্যে একটা ধর্মতাত্ত্বিক শক্ত বন্ধনও কাজ করছে। বম, পাংখোয়া, লুসাইরা ‘ব্রিটিশ খ্রিষ্টান’ হিসেবে পরিচিত। প্রায় ১০০ বছর হলো প্রকৃতি পূজারি থেকে তাঁদের ধর্মান্তরের। কিন্তু ‘বম’ শব্দের অর্থ যে বন্ধন—তার সামাজিক চেহারা একই রকম আছে। আশপাশের দেশের অ-বমদের সেটা মনে না রাখলে ভুল করা হবে।
- ট্যাগ:
- মতামত
- ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি