মুক্তিপণের টাকায় স্ত্রীর নামে ৩ ফ্ল্যাট, জমি
ছেলে আলিম হোসেনের ইতালি যাওয়ার স্বপ্ন পূরণ করতে দুই ব্যক্তির কাছে সাড়ে ৯ লাখ টাকা তুলে দেন মনি আক্তার। গত মার্চে আলিমকে ইতালি পাঠানোর কথা বলে দুবাই হয়ে বিভিন্ন দেশ ঘুরিয়ে নেওয়া হয় লিবিয়ার সীমান্ত শহর জুয়ারায়। আটকে রাখা হয় একটি গোপন ঘরে। আলিম মাকে ফোন করে বলেন, নৌকায় করে অবৈধ পথে তাঁকে লিবিয়া থেকে ইতালিতে নিয়ে যাওয়া হবে। এর পাঁচ দিন পর লিবিয়া থেকে মনি আক্তারকে জানানো হয়, তাঁর ছেলেকে পুলিশ আটক করেছে। ছেলেকে ছাড়াতে ছয় লাখ টাকা লাগবে।
মনি আক্তার বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘ছেলেকে ছাড়াতে জমি বিক্রি করে আমি কয়েক দফায় ২৭ লাখ টাকা দিয়েছি। কিন্তু আজও ছেলেকে ছেড়ে দেয়নি মানব পাচারকারী চক্রের সদস্যরা।’ তিনি বলেন, সর্বশেষ তিন মাস আগে ছেলের সঙ্গে কথা হয়েছে। এখন কোথায় আছেন, কেমন আছেন জানেন না।
গত ৩০ অক্টোবর মনি আক্তার বাদী হয়ে ঢাকার হাজারীবাগ থানায় আটজনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাত আরও পাঁচ থেকে ছয়জনকে আসামি করে মানব পাচার প্রতিরোধ আইনে মামলা করেন। ওই দিনই সাভারে অভিযান চালিয়ে আসামি আলমগীর হোসেন ও আক্তারুজ্জামান কুদ্দুস নামের দুই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) ইকোনমিক ক্রাইম অ্যান্ড হিউম্যান ট্রাফিকিং দল। তাঁদের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদে মানব পাচারকারী চক্রের মূল হোতার সন্ধান পায় পুলিশ। তাঁদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে উত্তর বাড্ডা ও ধানমন্ডি এলাকা থেকে চক্রের আরও দুই সদস্য ভাসান মাতুব্বর ও বেলায়েত হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বর্তমানে তাঁরা তিন দিনের রিমান্ডে রয়েছেন।
তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এই চক্রের মূল হোতা শরীফ হোসেন। তাঁর বাড়ি কুমিল্লায়। থাকেন লিবিয়াতে, সেখানে তাঁর গেম ঘর (আটক রেখে নির্যাতন করার স্থান) রয়েছে। নির্যাতনের ভিডিও এবং নির্যাতনের সময় মুঠোফোনে পরিবারের সদস্যদের কান্না ও চিৎকারের শব্দ শুনিয়ে মুক্তিপণের জন্য বিপুল অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেন শরীফ ও তাঁর সহযোগীরা।
- ট্যাগ:
- বাংলাদেশ
- মানব পাচার
- মুক্তিপণ
- অবৈধ সম্পত্তি