বৈশ্বিক ক্ষুধা সূচকে বাংলাদেশের অবনমন
গত ১৩ অক্টোবর প্রকাশিত হয়েছে ‘গ্লোবাল হাঙ্গার ইনডেক্স (জিএইচআই)-২০২২’, যা আমাদের কাছে বৈশ্বিক ক্ষুধা সূচক নামেও পরিচিত। আয়ারল্যান্ডভিত্তিক সংস্থা কনসার্ন ওয়ার্ল্ডওয়াইড ও জার্মানির ওয়েল্ট হাঙ্গার হিলফে যৌথভাবে জিএইচআই-২০২২ প্রকাশ করেছে।
বিশ্বের ১২১টি দেশের তথ্য এতে স্থান পেয়েছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘The Global Hunger Index (GHI) is a tool designed to comprehensively measure and track hunger at global, regional, and national levels’, যার অর্থ দাঁড়ায়, জিএইচআই’র মাধ্যমে বৈশ্বিক, আঞ্চলিক ও জাতীয় পর্যায়ে ক্ষুধা পরিমাপ করা হয়। বাংলাদেশসহ বিশ্বব্যাপী ক্ষুধা পরিস্থিতি নিয়ে জিএইচআই ২০২২-এ যেসব তথ্য ও ফাইন্ডিংস এসেছে, তা পর্যালোচনা করাই এ নিবন্ধের উদ্দেশ্য।
বৈশ্বিক ক্ষুধা সূচক নির্ধারণে চারটি মাপকাঠি ব্যবহার করা হয়েছে। এগুলো হলো-এক. অপুষ্টির হার, দুই. পাঁচ বছরের কম বয়সিদের মধ্যে উচ্চতার তুলনায় কম ওজনের শিশুর হার, তিন. পাঁচ বছরের কম বয়সিদের মধ্যে কম উচ্চতার শিশুর হার, এবং চার. পাঁচ বছরের কম বয়সি শিশুমৃত্যুর হার। ১০০ পয়েন্টের ভিত্তিতে প্রতিটি দেশের স্কোর নির্ধারণ করা হয়। ক্ষুধার তীব্রতা নির্ধারণে পাঁচটি লেভেল বা স্তর রয়েছে। স্তরগুলো হচ্ছে-নিম্ন (low), মাঝারি (moderate), গুরুতর (serious), ভয়ঙ্কর (alarming) এবং অতি ভয়ঙ্কর (extremely alarming)। ৯.৯ বা তার নিচের স্কোর অর্থ ক্ষুধার তীব্রতা নিম্ন পর্যায়ে। আর ১০-১৯.৯, ২০-৩৪.৯, ৩৫-৪৯.৯, ৫০ বা তার বেশি স্কোর বলতে যথাক্রমে মাঝারি, গুরুতর, ভয়ঙ্কর ও অতি ভয়ঙ্কর ক্ষুধার তীব্রতাকে বোঝায়। সূচকে সবচেয়ে ভালো স্কোর হলো শূন্য। স্কোর বাড়ার অর্থ হলো, সেই দেশের ক্ষুধা পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে। আর স্কোর কমে যাওয়ার অর্থ হলো, সেই দেশের খাদ্য ও পুষ্টি পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। এবারের সূচকে ৫-এর নিচে স্কোর পেয়ে সবচেয়ে ভালো অর্থাৎ শীর্ষ অবস্থানে থাকা ১৭ দেশ হলো-বেলারুশ, হার্জেগোভিনা, চিলি, চীন, ক্রোয়েশিয়া, এস্তোনিয়া, হাঙ্গেরি, কুয়েত, লাতভিয়া, লিথুয়ানিয়া, মন্টিনিগ্রো, নর্থ মেসিডোনিয়া, রোমানিয়া, সার্বিয়া, স্লোভাকিয়া, তুরস্ক ও উরুগুয়ে। আর সূচকের তালিকায় সবচেয়ে খারাপ অবস্থানে অর্থাৎ সবচেয়ে নিচে থাকা দেশগুলো হচ্ছে-সিরিয়া, দক্ষিণ সুদান, সোমালিয়া, বুরুন্ডি, ইয়েমেন, সেন্ট্রাল আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র, মাদাগাস্কার, গণপ্রজাতন্ত্রী কঙ্গো ও চাদ।
জিএইচআই-২০২২ যেসব গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিয়েছে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে-ক. সাম্প্রতিক বছরগুলোয় বিশ্বব্যাপী ক্ষুধার বিরুদ্ধে লড়াই অনেকটা নিস্ক্রিয় হয়ে পড়েছে। এর পেছনে সম্ভাব্য কারণগুলো হচ্ছে-বিভিন্ন দেশের মধ্যে সশস্ত্র সংঘাত, জলবায়ু পরিবর্তন, অর্থনীতিতে কোভিড-১৯-এর ক্ষতিকর প্রভাব এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, যা বিশ্বব্যাপী খাদ্য, জ্বালানি ও সারের দাম বৃদ্ধিতে ভূমিকা রেখেছে এবং ২০২৩ সালে ক্ষুধা পরিস্থিতিকে আরও খারাপের দিকে নিয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। খ. সূচক অনুযায়ী বর্তমানে ৪৪টি দেশে ক্ষুধার মাত্রা ‘গুরুতর’ বা ‘ভয়ঙ্কর’ পর্যায়ে পৌঁছেছে এবং বিশেষ ব্যবস্থা না নেওয়া হলে এসব দেশে ক্ষুধা হ্রাস করে ২০৩০ সালের মধ্যে তা নিম্নস্তরে আনা সম্ভব হবে না। গ. ন্যায়সংগত, অংশগ্রহণমূলক এবং টেকসই খাদ্যব্যবস্থা গড়ে তোলার মাধ্যমে খাদ্যনিরাপত্তা ব্যবস্থাকে এখনই পুনর্নির্মাণ করতে হবে। ঘ. দেশে দেশে, অঞ্চলে অঞ্চলে এবং সম্প্রদায়ে সম্প্র্রদায়ে বিরাজমান বৈষম্য ‘কাউকে পেছনে ফেলে নয়’-এসডিজির এ লক্ষ্য অর্জনে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।