মন্দার পদধ্বনিকালে আমলার বিলাসী বাসভবন

সমকাল সাইফুর রহমান তপন প্রকাশিত: ১৯ অক্টোবর ২০২২, ১৩:১০

দেশের দুই প্রধান আমলা মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও মুখ্য সচিবের জন্য রাজধানীতে স্বতন্ত্র দুই ভবন তৈরি হচ্ছে বলে জানিয়েছে সহযোগী এক বাংলা দৈনিক। আমাদের দেশে কেন্দ্রীয় পর্যায়ে তো বটেই; জেলা ও উপজেলা পর্যায়েও দায়িত্বশীল সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য নির্ধারিত বাড়ি আছে। যেমন প্রতিটি উপজেলায়ই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সরকারি উদ্যোগে নির্মিত বাসভবনে থাকেন। জেলাগুলোতেও জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের শীর্ষ কর্মকর্তাদের বসবাসের জন্য একই রকম আয়োজন আছে। রাজধানীতে শুধু রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও স্পিকার নন; বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী, সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রধান প্রকৌশলীর মতো সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের শীর্ষ কর্মকর্তাদের জন্য নির্ধারিত বাসভবন আছে। সেই হিসেবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও মুখ্য সচিব আলাদা বাসভবন পাচ্ছেন- এটা স্বাভাবিক বিষয় হওয়ার কথা। অন্তত সংবাদমাধ্যমে চর্চা হওয়ার মতো এমন কোনো খবর হওয়ার কথা নয়। বরং এতদিন যে তাঁদের জন্য কেন এমন কোনো আয়োজন হলো না- সেটিই চর্চার বিষয় হওয়ার কথা। কিন্তু বাস্তবতা হলো, সোমবার খবরটি প্রকাশিত হওয়ার পর ওই দুই শীর্ষ আমলার জন্য ভবন নির্মাণের প্রস্তাবই এখন জনপরিসরে অন্যতম প্রধান আলোচনার বিষয়। ইংরেজিতে যাকে বলে টক অব দ্য টাউন।


আসলে ওই বাংলা দৈনিকের প্রতিবেদনে বাসভবন দুটি সম্পর্কে যেসব তথ্য এসেছে, তাতে যে কোনো বোধবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের চক্ষু চড়কগাছ হওয়ার কথা। বলা হয়েছে, প্রতিটি ভবন হবে তিন তলা; স্পেস থাকবে সাড়ে ১৮ হাজার বর্গফুট। একটি নয়, এক জোড়া সুইমিং পুল থাকবে প্রতিটি বাড়িতে। এই দুই জোড়া সুইমিং পুলের জন্য খরচ হবে পাঁচ কোটি টাকারও বেশি। প্রায় পৌনে দুই কোটি টাকা ব্যয়ে ভবন দুটিতে বসানো হবে অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা। ১৮ লাখ টাকা ব্যয়ে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণেরও ব্যবস্থা থাকবে সেখানে। সোয়া দুই কোটি টাকা খরচ করে অভ্যন্তরীণ সাজসজ্জা করা হবে। সব মিলিয়ে ভবন দুটি নির্মাণে খরচ হবে প্রায় ৪৩ কোটি টাকা। রীতিমতো রাজকীয় আয়োজন।


করোনা মহামারি ও ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের যুগলবন্দিত্বে সরকার গত কয়েক মাস ধরে নিত্যদিনের জ্বালানি খরচ জোগাতে ব্যর্থ হয়ে জাতীয় অর্থনীতির অনাকাঙ্ক্ষিত সংকোচন ও জনরোষের ঝুঁকি সত্ত্বেও বিদ্যুতের ভয়াবহ লোডশেডিং চালাচ্ছে। তহবিল সংকটের কারণে অনেক জনগুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প ব্যয়ও কাটছাঁট করছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিশেষ করে এশিয়া ও আফ্রিকায় আগামী বছর দুর্ভিক্ষ হতে পারে বলে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থাসহ (এফএও) বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা ইতোমধ্যে সতর্কবার্তা দিয়েছে এবং তা এড়াতে খোদ প্রধানমন্ত্রী প্রতিদিন সরকারি সংস্থাগুলোর পাশাপাশি জনগণকেও প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন। এমন সময়ে ওই দুই আমলার জন্য এমন রাজকীয় ভবন নির্মাণের খবরটি এলো। ফলে মানুষকে যে খবরটা নাড়া দিয়েছে, তা স্বাভাবিক।


কিন্তু আমার মনে হয়, বাজেটের টানাটানি না থাকলেও পূর্ত মন্ত্রণালয় থেকে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য পাঠানো প্রকল্পটি সচেতন মানুষের মনে বিস্ময় জাগাত। একজন মুখ্য সচিব বা মন্ত্রিপরিষদ সচিবের পারিবারিক সদস্য কতজন যে, তাঁদের জন্য একেবারে ১৮ হাজার বর্গফুটের একটি আলিশান বাড়ি লাগবে? লন্ডনের ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিট, যেখানে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী থাকেন; ভবনের মোট স্পেস ৩৮০০ বর্গফুট। সেখানে প্রধানমন্ত্রীর বাসস্থানের পাশাপাশি দাপ্তরিক কাজের জন্য জায়গা আছে। আমাদের মন্ত্রিপরিষদ সচিব বা মুখ্য সচিবের নিশ্চয় ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর মতো সাচিবিক সহায়তা লাগে না। প্রতিটি ভবনে নাকি সাতটি এলইডি টেলিভিশন লাগানো হবে। কে দেখবে এত টেলিভিশন? আমাদের আধুনিক পরিবারগুলো, বিশেষত সচ্ছল পরিবারের বেশিরভাগই নিউক্লিয়ার ধরনের। অর্থাৎ স্বামী-স্ত্রী এবং এক বা দুই সন্তান নিয়েই একটি পরিবার। সন্তানরা একটু বড় হলে আবার পাড়ি জমায় বিদেশে; তখন তো আমি-তুমির বাইরে কেউ থাকে না। এখন এ ধরনের পরিবারের জন্য দুটি সুইমিং পুল কেন দরকার হবে? ভবনগুলোর নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে সাড়ে একুশ কোটি টাকা করে। এগুলো রক্ষণাবেক্ষণ করতে প্রতি বছর কত টাকা লাগবে, তা কি ভেবে দেখা হয়েছে?

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও