বীজের রাজনীতিতে বিলুপ্তপ্রায় হরি ধান
আমনের অন্যান্য জাতের তুলনায় ফলন বেশি। খরাসহিষ্ণু জাতটিতে রোগবালাইয়ের আক্রমণও তেমন একটা দেখা যায় না। ধানের গোছা পুরুষ্টু ও বিচালিও শক্ত। চাল মোটা হলেও এর ভাত খেতে সুস্বাদু বলে জানিয়েছেন ক্রেতারা। গাছ পুষ্ট ও লম্বা হওয়ায় খড়ের দামও পাওয়া যায় অন্যান্য জাতের তুলনায় বেশি। এর পরও গত দুই দশকে হরি ধানের আবাদ সম্প্রসারণ করা যায়নি। এ জাতের উদ্ভাবক হিসেবে প্রয়াত কৃষক হরিপদ কাপালি জেলা পর্যায়ের নানা পুরস্কার পেলেও এখনো বীজের জাত হিসেবে সরকারি স্বীকৃতি মেলেনি হরি ধানের। স্থানীয় পর্যায়ের কয়েকজন কৃষক ও হরিপদ কাপালির পরিবারের সদস্যরা ছাড়া আর কাউকে এখন আর এ ধান আবাদ করতে দেখা যায় না। এছাড়া ময়মনসিংহ জেলার কিছু এলাকায় এখনো সামান্য পরিমাণে আবাদ হচ্ছে। মূলত আবাদ সম্প্রসারণ না হওয়ার কারণেই হরি ধান এখন এক প্রকার বিলীনের পথে বলে জানিয়েছেন কৃষি খাতের বাজার পর্যবেক্ষকরা।
স্থানীয় পর্যায়ে উদ্ভাবিত এমন অনেক ধানের জাত বাজার না পেয়ে হারিয়ে গিয়েছে। দেশের খাদ্যনিরাপত্তায় জাতগুলো অনেক বড় ভূমিকা রাখতে পারত বলে অভিমত বিশেষজ্ঞদের। তাদের ভাষ্যমতে, এমন অনেক জাতই বীজের বাজারকেন্দ্রিক রাজনীতিতে টিকতে না পেরে হারিয়ে গিয়েছে। হরি ধানের ক্ষেত্রেও এখন এমনটাই ঘটছে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।
যদিও জাতটি উদ্ভাবনের পর খুব দ্রুতই জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। কম সারে অধিক ফলনের কারণে দ্রুত বিভিন্ন স্থানে জাতটির আবাদ ছড়িয়ে পড়ে। লম্বা ও শক্ত এ জাতের ধান গাছ অনেক ঘাতসহিষ্ণু। ঝড়েও আবাদের ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকি ছিল কম। যদিও পরে জাতটি বীজকেন্দ্রিক বাজারজাত কৌশল ও রাজনীতিতে টিকতে পারেনি বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট অনেকেরই। তাদের বক্তব্য হলো দেশীয় প্রজাতির উদ্ভাবিত এ উচ্চফলনশীল জাতটি সুকৌশলে একটি মহল বাজার থেকে উঠিয়ে দিয়েছে। জাতটির আবাদ সম্প্রসারণ না করে উল্টো মানুষকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।