আমাজনের অগ্নিকাণ্ড ভয়ংকর পরিণতি ডেকে আনছে
আমাজন একটি রহস্যময় জঙ্গল, সেখানকার জীববৈচিত্র্য ব্যাপক ও বৈচিত্র্যময়। জঙ্গলে রয়েছে ১ হাজার ২৯৪ প্রজাতির পাখি, ৪২৭ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী, ৩৭৮ প্রজাতির সরীসৃপ, ৪২৮ প্রজাতির উভচর প্রাণী, ২ দশমিক ৫ মিলিয়ন প্রজাতির পোকামাকড় ও ২ হাজার ২০০ প্রজাতির মাছ। এ ছাড়া প্রায় ৪০ হাজার প্রজাতির গাছপালা রয়েছে। হরেক জীববৈচিত্র্য এবং হাজার হাজার প্রজাতির প্রায় ৩৯০ বিলিয়ন গাছপালার সমাহারের কারণে আমাজনকে বলা হয় ‘মহাবন’। আবার ‘বিশ্বের ফুসফুস’ নামেও আখ্যায়িত করা হয়েছে আমাজনকে। অথচ সেই আমাজন আমাদের চোখের সামনেই নানা দুর্যোগের কবলে পড়ছে।
আমাজনে দফায় দফায় আগুন লাগানো হচ্ছে; দাবানলেও পুড়ছে। ফলে বছরে ২২৮ মেগাটন কার্বন ডাই-অক্সাইড বায়ুমণ্ডলে নির্গত হচ্ছে; অর্থাৎ একদিকে বিষাক্ত গ্যাস শোষণ করে ওজোনস্তর রক্ষা করছে আমাজন, অন্যদিকে কার্বন নিঃসরণ হচ্ছে আগুন লাগানোর কারণে। যার জন্য প্রকৃতি দায়ী নয়, অধিকাংশই দায়ী হচ্ছে স্থানীয় লোকজন; বিশেষ করে আমাজনে আগুন লাগানোর জন্য বেশির ভাগই দায়ী হচ্ছে ব্রাজিল। আমাজন জঙ্গলের ৫৫ লাখ বর্গকিলোমিটার আয়তনের মধ্যে ৬০ শতাংশ পড়েছে ব্রাজিল সীমানায়, যা সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হয়েছে দেশটি। সংবাদমাধ্যমে জানা গেছে, ব্রাজিলের এনজিও সংস্থার লোকেরা এ ধরনের জঘন্য কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত; যেখানে দেশটির সরকারের স্বার্থও জড়িত রয়েছে বলে জানা যায়। ব্রাজিল সরকার তাই সব সময় বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করে আসছে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, দাবানলের কারণেই জঙ্গল পুড়ছে। আবার বলা হচ্ছে, কৃষকেরা আগুন লাগিয়েছেন চাষাবাদ করার জন্য। তারা এনজিওগুলোর বিষয়টি সম্পূর্ণ চেপে যাচ্ছে। তবে বিশ্ব গণমাধ্যম সোচ্চার থাকায় ব্রাজিলের সেই অপচেষ্টা মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে বারবার।
সর্বশেষ বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে ২০২০ সালের আগস্ট মাসে। পরিবেশবাদী সংস্থা ‘গ্রিনপিস’ জানিয়েছে, ওই সময় প্রথম ১০ দিনে ১০ হাজার ১৩৬টি জায়গায় আগুন জ্বলতে দেখা গেছে। ২০১৯ সালের তুলনায় এই অগ্নিকাণ্ড ১৭ শতাংশ বেশি ছিল। এ ছাড়া শুষ্ক মৌসুমে প্রতিদিনই কম-বেশি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে আমাজন জঙ্গলে, যা অনেক সময় জরিপে আসে না অথবা গণমাধ্যমে প্রচার হয় না। তবে দুষ্কৃতকারীদের দ্বারা যতগুলো অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা আমাজনে ঘটেছে, তার সবগুলোর নেপথ্যের কারণ অস্বীকার করছে ব্রাজিল সরকার। ২০১৯ সালের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নিয়ে ব্রাজিল সরকারের মিথ্যাচারের চিত্রও তুলে ধরেছিল গণমাধ্যম সংস্থা বিবিসি।
বিশ্বের অন্যান্য গণমাধ্যমের পাশাপাশি বিবিসি বাংলা ২০১৯ সালের ২৭ আগস্ট এক গবেষণার উদ্ধৃতি দিয়েছে, ‘বন উজাড় করা আর দাবানলের মধ্যে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করলে ব্রাজিলের উত্তরাঞ্চলের খরা থেকে আগুনের সূত্রপাতের তত্ত্বটিকে আবার ভুল হিসেবে ধরে নিতে হবে।’
ওই গবেষণায় আরও উঠে এসেছে যে শুষ্ক মৌসুমে এ রকম ব্যাপকভাবে দাবানল ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে খরার সম্পর্ক থাকার সম্ভাবনা সামান্যই, যেখানে অন্যবারের চেয়ে এবার খরার তীব্রতাও কম। গবেষণায় আরও উদ্ধৃত করা হয়েছে, ‘সবচেয়ে বেশি পরিমাণ আগুনের ঘটনা যে ১০টি মিউনিসিপ্যালিটিতে হয়েছে, সেখানেই সবচেয়ে বেশি মাত্রায় বন উজাড় করা হয়েছে। ২০১৯ সালের আগুনের ৩৭ শতাংশ ঘটেছে এই ১০টি স্থান থেকে, আর ওই বছরের জুলাই পর্যন্ত মোট উজাড় করা বনের ৪৩ শতাংশ ঘটেছে এসব এলাকায়। নতুন করে বৃক্ষহীন হওয়া ও কিছুটা খরায় ভুগতে থাকা এলাকায় দাবানলের ব্যাপকতা আগুনের চরিত্রের একটি বিষয়ের দিকেই ইঙ্গিত করে। কোনো এলাকা বৃক্ষহীন করে ফেললে, সেটা নতুন ওই এলাকাকে জ্বালিয়ে দেওয়ার প্রবণতা সৃষ্টি করে।’