বিএনপি ও জামায়াতের জোট আছে, জোট নেই
বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর জোট আছে কি নেই- তা স্পষ্ট নয়। একাদশ সংসদ নির্বাচনের পর দুই দলের সম্পর্কের টানাপোড়েনের মধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়ানো ভিডিওতে জামায়াত আমির ডা. শফিকুর রহমানকে বলতে শোনা গেছে, তাঁর দল বিএনপির জোটে নেই; বিএনপির সঙ্গে আলোচনা করেই জোট ছাড়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
ভিডিওটির সত্যতা স্বীকার করলেও জামায়াত নেতারা বলেছেন, দলীয় প্রধানের বক্তব্য ঘরোয়া অনুষ্ঠানের। জামায়াত জোট ছাড়েনি। বিএনপি নেতারাও জামায়াতের জোট 'ত্যাগের' বিষয়ে নীরব। আওয়ামী লীগ একে বিএনপির বড় উইকেটের পতন বলছে। বিএনপি ও জামায়াত সূত্র বলছে, জোট আসলে নেই, তা দুই দলই জানে। কিন্তু জোট ভাঙার দায় কোনো দলই নিতে চায় না। যুগপৎ কর্মসূচি হতে পারে, কিন্তু জোটবদ্ধ কর্মসূচির সম্ভাবনা নেই।
জামায়াত আমিরের যে বক্তব্য ছড়িয়েছে, সেটি কবেকার- তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। দলের একটি সূত্র বলছে, গত সপ্তাহে দলীয় বৈঠকে ভার্চুয়ালি বক্তব্যের পর কর্মীদের প্রশ্নের জবাবে জোট ছাড়ার কথা বলেছেন শফিকুর রহমান। আরেকটি সূত্র বলছে, গত ১১ মার্চ কুমিল্লা দক্ষিণ জেলার কর্মী সম্মেলনে তিনি এ বক্তব্য দিয়েছেন।
সেই সম্মেলনের ছবি পাওয়া গেলেও গত এক সপ্তাহে শফিকুর রহমান যেসব কর্মসূচিতে অংশ নেন, এর ছবির সঙ্গে ফাঁস হওয়া ভিডিওটির মিল নেই। গত কয়েক দিনে জামায়াত আমির ফরিদপুর, কুষ্টিয়া ও চুয়াডাঙ্গায় দলীয় কর্মসূচিতে সশরীরে অংশ নেন। কয়েকটি বৈঠকে ভার্চুয়ালি যোগ দেন। দলটির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম নির্বাহী পরিষদের সদস্য এবং প্রচার বিভাগের সেক্রেটারি হিসেবে মুখপাত্রের দায়িত্বে থাকা মতিউর রহমান আকন্দ সমকালকে বলেছেন, 'আমিরের বক্তব্য অনানুষ্ঠানিক ও ব্যক্তিগত। জামায়াত জোট ছাড়েনি।'
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জামায়াতের জোট 'ত্যাগ' বিষয়ে মন্তব্য করেননি। সাংবাদিকদের প্রশ্ন তিনি এড়িয়ে যান। মন্তব্য করেননি বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের সমন্বয়ক নজরুল ইসলাম খানও। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রহমান বলেছেন, 'বিএনপির বড় উইকেট পড়ে গেছে। জামায়াতে ইসলামী বলেছে, বিএনপির সঙ্গে তারা আর নেই।'
১৯৯৯ সালে বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ঐক্যজোট চারদলীয় জোট গঠন করে। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের জাতীয় পার্টি পরের বছরে জোট ছাড়ে। চার দল ২০০১ সালের নির্বাচনে জিতে সরকার গঠন করে।
২০১২ সালে চারদলীয় জোট সম্প্রসারিত হয়ে ২০ দলীয় জোট হয়। জামায়াত ছাড়তে বিএনপির ওপর নিজ দলে নেতাকর্মী, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চাপ রয়েছে। দলের স্থায়ী কমিটি একাধিকবার সিদ্ধান্ত নিয়েও ভোটের সমীকরণে জোট ভাঙেনি। যদিও ২০১৫ সালের ব্যর্থ আন্দোলনের পর দুই দলের যৌথ কর্মসূচি নেই। কিন্তু ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে জোট করেই ভোট করে বিএনপি-জামায়াত। ধানের শীষ প্রতীকে প্রার্থী হন নিবন্ধন হারানো জামায়াতের নেতারা। নির্বাচনের পর সাড়ে তিন বছর জোটের কর্মসূচি নেই।