আস্থা নেই, রোগী ছুটছে বিদেশ
২০২১ সালে প্রচণ্ড মাথাব্যথা দেখা দেয়। কিছুদিন পর হাত-পা ফুলে যায়। চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। ডাক্তার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানান, তাঁর রক্তে ক্যান্সার দেখা দিয়েছে। চিকিৎসার জন্য আটটি কেমোথেরাপি দেওয়া হয়। সুস্থ হন না তিনি। নিরুপায় হয়ে এক বন্ধুর পরামর্শে ভারতে যান। সেখানে পরীক্ষার পর চিকিৎসক জানান, তাঁর রক্তে কোনো সমস্যা নেই। ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী অল্প দামি ওষুধপত্র কিছুদিন সেবনের পর তিনি সুস্থ হয়ে যান। তবে কেমোথেরাপির কারণে এখনও কিছু জটিলতায় ভুগছেন।
আর একজন বেসরকারি চাকরিজীবী রহমান মাসুদ। তাঁর মেয়ে দীর্ঘদিন কষ্ট পেলেও একাধিক চিকিৎসকের বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষায় সঠিক রোগ নির্ণয় হয় না। একজন চিকিৎসক জানান, ফিস্টুলার (ভগন্দর) অস্ত্রোপচার করতে হবে। বয়স কম হওয়ায় ৪ থেকে ৫ বারে এই সার্জারি করতে হবে এবং খরচ পড়বে ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা। এক শিক্ষকের পরামর্শে মেয়েটিকে সম্প্রতি ভারতের একটি হাসপাতালে নেওয়া হয়। একটিমাত্র সার্জারি করে মেয়েটি এখন সুস্থ। শরীরে কোনো ধরনের জটিলতাও নেই।
রহমান মাসুদ সমকালকে বলেন, দেশীয় চিকিৎসকদের আধুনিক চিকিৎসাব্যবস্থা সম্পর্কে ধারণা নেই। চিকিৎসা নিতে গিয়ে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। অন্যদিকে, বিদেশে তুলনামূলক কম খরচে চিকিৎসা নেওয়া সম্ভব।
এ রকম আরও অনেক ঘটনার তথ্য পাওয়া গেছে। প্রায় প্রত্যেকের বক্তব্য একই রকম, তথ্য সব মিলিয়ে দেশীয় চিকিৎসা ব্যবস্থায় ভরসা নেই জনগণের। দেশীয় চিকিৎসা ব্যবস্থায় আস্থাহীনতা, দীর্ঘসূত্রতা আর ভোগান্তির কারণে বিদেশমুখিতা বাড়ছে দিন দিন। অন্যদিকে, কম টাকা খরচ করে প্রতিবেশী দেশগুলোতে সুচিকিৎসাও মিলছে। যদিও জটিল রোগ ছাড়া থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, ভারতে চিকিৎসা নিতে গেলে আনুমানিক ১ লাখ খরচ হয়। তবে ভারতে ট্রেন বা বাসে গেলে ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকার মতো খরচ পড়ে।
অতিমারি করোনার কারণে মাঝখানে দু'বছর রোগীদের বিদেশযাত্রায় ছেদ পড়েছিল। এখন করোনা পরিস্থিতি মোটামুটি স্বাভাবিক থাকায় চিকিৎসা নিতে রোগীদের বিদেশে যাওয়ার চাপ অনেকখানি বেড়ে গেছে। ভারতের চিকিৎসা ভিসা নিতে প্রতিদিনই থাকছে রোগীদের লম্বা সারি। থাইল্যান্ডে যাওয়ার ভিসা কার্যক্রমে শিথিলতা আসায় দেশটিতেও উড়াল দিচ্ছেন অনেকে।
পর্যবেক্ষণকারীরা জানান, ২০১০ সাল থেকে এই চিকিৎসা-পর্যটন বেশি বেড়েছে। তবে করোনা মহামারির কারণে বহির্বিশ্বের সঙ্গে যোগাযোগ সমস্যায় কিছুদিন বন্ধ ছিল এই প্রবণতা। চলতি বছরে আবার স্বরূপে ফিরেছে। তবে এই দুঃখজনক পরিস্থিতি পরিবর্তনে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে তেমন উদ্যোগ নেই।
২০০৬ সালের পর দেশে বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার মান উন্নত করতে বড় কোনো হাসপাতাল গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি। ২০০৫-০৬ সালে অ্যাপোলো (এখন এভারকেয়ার), ইউনাইটেড ও স্কয়ার- এই তিনটির পরে আর হয়নি। এই খাতে অনেক প্রতিষ্ঠান ও বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আগ্রহী হলেও এ দেশের অনেকেই বাধা সৃষ্টি করে। দেশে নিম্নমানের, এমনকি অননুমোদিত বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার অনেক।