এখনো অধরা ১৩ আসামি, কে কোথায়?
রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে ২১ আগস্ট ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা মামলার ১৩ আসামি এখনো ধরা পড়েননি। পলাতক এই আসামিরা গত ১৮ বছর ধরে কে কোথায় আছেন সে বিষয়ে স্পষ্ট তথ্য নেই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর কাছে। এই ১৩ জনের মধ্যে শুধু চারজনের নাম ঝুলছে আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ‘ইন্টারপোলের’ রেড নোটিশের তালিকায়। বাকিদের নাম কেন ওই তালিকায় নেই তার সদুত্তর নেই তদন্ত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কাছে।
ভয়াবহ এই হামলার ঘটনায় ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর হত্যা ও বিস্ফোরকদ্রব্য আইনের দুই মামলায় বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুত্ফুজ্জামান বাবর, উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। আর বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান, খালেদার রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরীসহ ১৯ জনকে দেওয়া হয় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। এ ছাড়া ১১ পুলিশ ও সেনা কর্মকর্তাকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
এই আসামিদের মধ্যে ৩৩ জন কারাগারে আছেন। অন্য মামলায় ফাঁসি কার্যকর হয়েছে তিন আসামির। তাঁরা হলেন হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশের (হুজি-বি) নেতা মুফতি আবদুল হান্নান, বিপুল ও জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের। করোনায় আক্রান্ত হয়ে গত বছরের ১৫ আগস্ট মারা গেছেন কারাবন্দি আবদুর রহিম। গত ৪ নভেম্বর সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে মারা যান মাওলানা আবদুস সালাম।
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী সূত্র জানায়, পলাতক ১৩ আসামি হলেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমান, বিএনপি নেতা হারিছ চৌধুরী, শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ, সাবেক সামরিক কর্মকর্তা লে. কর্নেল সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দার, মেজর জেনারেল এ টি এম আমিন আহমদ, হানিফ পরিবহনের মালিক মোহাম্মদ হানিফ, জঙ্গিনেতা মাওলানা তাজউদ্দিন, মহিবুল মুত্তাকিন, আনিসুল মোরসালিন, মোহাম্মদ খলিল, মাওলানা লিটন ওরফে দেলোয়ার হোসেন ওরফে জোবায়ের, জাহাঙ্গীর আলম বদর ও রাতুল আহমেদ বাবু।
তাঁদের মধ্যে তারেক রহমান গত এক দশকের বেশি সময় যুক্তরাজ্যে রয়েছেন সপরিবারে। ২১ আগস্ট ছাড়াও মুদ্রা পাচারের এক মামলায় সাত বছর এবং জিয়া এতিমখানা ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ১০ বছরের সাজার রায় মাথায় নিয়ে তারেক দেশের বাইরে আছেন।
পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র বলছে, পলাতক আসামিরা সবাই দেশের বাইরে এটা নিশ্চিত। তবে কে কোথায় আছেন, সে বিষয়ে কিছু ধারণা থাকলেও সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই তাদের কাছে। তবে একাধিক সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, তাজউদ্দিন দক্ষিণ আফ্রিকা অথবা পাকিস্তানে আছেন। রাতুল দক্ষিণ আফ্রিকায়, কায়কোবাদ মধ্যপ্রাচ্যের কোনো দেশে, হানিফ থাইল্যান্ড অথবা মালয়েশিয়ায়, সাবেক সেনা কর্মকর্তা এ টি এম আমিন যুক্তরাষ্ট্র ও দুবাইয়ে, সাইফুল জোয়ার্দার কানাডায়, জঙ্গি আনিসুল মুরসালিন ওরফে মুরসালিন ও মহিবুল মুত্তাকিন ভারতের তিহার কারাগারে আছেন।
এদিকে ইন্টারপোলের রেড নোটিশের তালিকায় থাকা হারিছ চৌধুরীকে নিয়ে এখনো ধোঁয়াশায় আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো। তাঁকে নিয়ে উঠছে নানা প্রশ্ন। হারিছ চৌধুরী বেশ কিছুদিন আগে মারা গেছেন বলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী জানতে পারে। পরে কোথায় তাঁর কবর দেওয়া হয়েছে সে বিষয়টিও বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়। তবে তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র এ নিয়ে কোনো কিছু এখনো খোলাসা করেনি। তাই বিষয়টি খুবই রহস্যজনক হয়ে আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, অতীতে ছয়জনের নাম ইন্টারপোলের রেড নোটিশে থাকলেও বর্তমানে তারেক রহমান ও মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদের নাম সরানো হয়েছে। রাতুল আহমেদ বাবুর নাম থাকলেও ছবি নেই। তবে হারিছ চৌধুরী বেশ কিছুদিন আগে ঢাকায় অসুস্থ হয়ে মারা যাওয়ার বিষয়ে একাধিক গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হলেও সে বিষয়ের সত্যতা যাচাইয়ের জন্য এখনো কাজ চলছে বলে দুই দফায় ইন্টারপোলের বাংলাদেশ শাখা ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরোতে (এনসিবি) চিঠি দিয়েছে অপরাধ তদন্ত সংস্থা-সিআইডি।
শনিবার এ বিষয়ে কথা হয় পুলিশ সদর দপ্তরের এনসিবির দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত ডিআইজি মহিউল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘পলাতক থাকা ১৪ জনের মধ্যে আমরা কেবল ছয়জনের নামসহ তাঁদের তথ্য পেয়েছি। সিআইডির পাঠানো ওই ছয়জনের নাম রেড নোটিশে ঝুলানো হয়েছিল। পরে তারেক রহমান ও শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদের নাম তুলে ফেলা হয়। আসামিরা ইন্টারপোলকে বুঝিয়েছেন যে এটা রাজনৈতিক ঘটনা। তবে আমরা তাঁদের নাম আবার ওঠানোর চেষ্টা করছি। ’
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালানো হয়েছিল। হামলায় ঘটনাস্থলে নিহত হন ২২ জন। আহত হন কয়েক শ নেতাকর্মী। পরে চিকিত্সাধীন অবস্থায় আরো দুজন মারা যান। প্রাণে বেঁচে গেলেও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও তত্কালীন বিরোধী দলের নেত্রী শেখ হাসিনার শ্রবণশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।