ডেঙ্গু থেকে বাঁচার উপায়
বাংলাদেশে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত ১৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সর্বশেষ বিজ্ঞপ্তিতে জানা যায়, ১ জানুয়ারি থেকে ৫ আগস্ট ২০২২ পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মোট তিন হাজার ৯৭ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকায় দুই হাজার ৬০৪ জন ও ঢাকার বাইরে ভর্তি হয়েছেন ৪৯৩ জন ডেঙ্গু রোগী। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সারাদেশের বিভিন্ন হাসপাতালে বর্তমানে ডেঙ্গু আক্রান্ত ৩৮০ রোগী চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এরমধ্যে ৩০৬ জন ঢাকার মধ্যে এবং ৭৪ জন রোগী ঢাকার বাইরের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আছেন।
ডেঙ্গু জ্বর কি:
ডেঙ্গু একধরণের ভাইরাল জ্বর। এ জ্বরের ধরণ চারটিঃ ডেন-১, ডেন-২, ডেন-৩ ও ডেন-৪।
জ্বর, মাথাব্যথা, চোখের পেছনে ব্যথা, মাংশপেশীতে ব্যথা এবং র্যাশ ওঠাই ডেঙ্গুর প্রধান লক্ষণ। সব বয়সের শিশু, গর্ভবতী নারী, বয়স্ক ব্যক্তি এবং আগে থেকে যারা শারীরিক বিভিন্ন জটিলতায় ভুগছেন, তাদের জন্য ডেঙ্গু মারাত্মক হয়ে উঠতে পারে। তাই শরীরে জ্বর বা অন্য কোনো উপসর্গ দেখা দিলে অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
ডেঙ্গুজ্বর প্রতিরোধে যা মানতে হবে
ডাক্তারের পরামর্শ নিন: ভাইরাস জ্বর স্বাভাবিকভাবে বোঝা যায় না বলে মনে করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান ও প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ।
জ্বর হলে রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে ডেঙ্গু হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত হতে হবে। ডেঙ্গু নিয়ে বাংলাদেশের সব ডাক্তারই কম-বেশি জানেন। ডেঙ্গু হলেই মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে যাওয়ার তেমন কোন প্রয়োজনীয়তা নেই। জেনারেল ফিজিশিয়ান বা প্রাইভেট প্র্যাকটিশনার - যে কারও থেকেই পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে ।
বিশেষ কোনো জটিলতা থাকলে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে যাওয়া যেতে পারে। ডেঙ্গুর কোন বিশেষায়িত চিকিৎসাব্যবস্থা নেই। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চললে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অল্প কয়েকদিনেই সুস্থ হওয়া যায়।
পরিপূর্ণ বিশ্রাম করুন: ডা. আব্দুল্লাহ বলেন, অসুস্থ হলে এমনিতেই মানুষ দূর্বল হয়ে যায়। ডেঙ্গু জ্বর শরীরকে অনেক কাহিল করে ফেলে। ১০৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত জ্বর উঠতে পারে। শরীর ব্যথা, মাথা ব্যথা, জয়েন্টগুলোয় ব্যথা অনুভূত হবে। অনেক ক্ষেত্রে রোগীর ব্রেকবোন ফিভার বা হাড়ভাঙ্গা জ্বরও হয়ে থাকে। ডেঙ্গুর হিমোরোজিক ফিভারের কারণে অনেক সময় রক্তক্ষরণও হয়। ৪-৫ দিন পর শরীরে র্যাশ বের হয়। দাঁত ব্রাশ করলে রক্তক্ষরণ হয়, নাক দিয়ে রক্তক্ষরণ হয়, প্রস্রাব- পায়খানার সঙ্গেও রক্ত যেতে পারে।
নারীদের ক্ষেত্রে পিরিয়ডকালীন রক্তক্ষরণ স্বাভাবিকের চেয়ে দীর্ঘ সময় নিয়ে হয়। এ সময় বিশ্রামের কোনো বিকল্প নেই। রেস্ট ছাড়া ডেঙ্গু থেকে পরিত্রাণ পাওয়া অসম্ভব। এছাড়া ভারী কাজ থেকেও রোগীর শারীরিক অবস্থা খারাপ হতে পারে।
খাবার ও পানীয় নিয়ে সচেতন হন: ডেঙ্গু হলে খাওয়া দাওয়ার ক্ষেত্রে কোনো বাঁধা-ধরা নিয়ম নেই। তবে প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে। ডেঙ্গু হলে রোগীর প্লাজমা লিকেজ হয়ে শরীরে পানির ঘাটতি দেখা দেয়। নিয়মিত ফলের রস, পানি, ওরাল স্যালাইন, ডাবের পানি ইত্যাদি ইলেকট্রোলাইট সম্বৃদ্ধ তরল পান করলে প্লাজমা লিকেজ কম হবে। শর্করা, প্রোটিন ও ভিটামিন সি সমৃদ্ধ সাধারণ খাবার বন্ধ করা যাবে না। স্বাস্থ্যসম্মতভাবে ঘরে বানানো খাবার খাওয়ার অভ্যাস করুন। পানি পানের বিষয়ে অবহেলা করলে কিডনির জটিল রোগও হতে পারে। অস্বাস্থ্যকর স্ট্রিট ফুড, তৈলাক্ত বা মসলাদার ভাজাপোড়া ধরনের খাবার এবং ক্যাফিনযুক্ত পানীয় একেবারে রুটিন করে এড়িয়ে চলুন।
জ্বর কমাতে কী করবেন: ডেঙ্গু জ্বর অনেক হাই টেম্পারেচারের হয়। জ্বর বাড়লে কিছু সময় পরপর পানি দিয়ে শরীর মুছে নিবেন। মুখে খাওয়ার প্যারাসিটামল জাতীয় ট্যাবলেট ও বাচ্চাদের জন্য সিরাপ চলতে থাকবে। মুখে খাওয়ার অবস্থায় না থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে সাপোজিটরি ব্যবহার করা যেতে পরে।