সাম্প্রদায়িক হামলার রাজনৈতিক অর্থনীতি

সমকাল জোবাইদা নাসরীন প্রকাশিত: ২২ জুলাই ২০২২, ০৯:২৫

নড়াইলের মির্জাপুরে কয়েক দিন আগে ভয়াবহ ঘটনা ঘটেছিল। অর্থাৎ এ রকমই একটি ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে সেখানকার এক কলেজ অধ্যক্ষকে জুতার মালা পরানো হয়। সেই রেশ না কাটতেই ১৫ জুলাই 'ধর্ম অবমাননা'র অভিযোগে সেই নড়াইলেরই লোহাগড়ায় হিন্দু বাড়িতে হামলা ও আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে।


সংবাদমাধ্যমে বলা হয়েছে, ফেসবুকে এক পোস্টের নিচে এক শিক্ষার্থী ধর্মীয় অবমাননামূলক মন্তব্য করেছে বলে এলাকায় ছড়িয়ে দেওয়া হয় এবং সেই অভিযোগ তুলে তার বাড়িতে হামলা ও আগুন দেওয়া হয়। সর্বশেষ গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হলো, হামলাকারীদের নয় বরং অভিযুক্ত সেই শিক্ষার্থী এবং তার বাবাকে আটক করেছে পুলিশ।


কেন একই কায়দায় এই সাম্প্রদায়িক হামলাগুলো হচ্ছে? এগুলো কি আসলে নিছক হামলা? এই 'ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত' আসলে কী অর্থ বহন করে? এর রাজনৈতিক অর্থনীতিই আসলে এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। এসব হামলার মূলে থাকে ভোট এবং জমি দখলের রাজনীতি।


এখানে বলে রাখা প্রয়োজন, বাংলাদেশে গত এক দশকে যত সাম্প্রদায়িক হামলা হয়েছে, এর বেশিরভাগই ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে। প্রথম সাম্প্রদায়িক হামলাটি হয় ২০১২ সালে। ইসলামের ধর্মগ্রন্থ অবমাননা করে স্ট্যাটাস দেওয়া হয়েছে এবং একজন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী সেই পোস্টটি দিয়েছেন- এমন অভিযোগে ওই বছর ২৯ সেপ্টেম্বর রাতে রামুতে হামলার ঘটনা ঘটে। পাশাপাশি উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলায়ও সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। দু'দিনের এই সহিংস ঘটনায় আহত হন রামু ও উখিয়ার বহু বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী। আরও ক্ষতিগ্রস্ত হয় ১৯টি বৌদ্ধবিহার। এই ঘটনার রেশ হিসেবে সে সময়ও এলাকা এবং দেশত্যাগ করে বেশ কয়েকটি বৌদ্ধ পরিবার। তবে এখানে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হলো, যার বিরুদ্ধে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছিল, সেই উত্তম কুমার বড়ুয়ার কোনো খোঁজ হামলার দিন রাত থেকে আজ পর্যন্ত মেলেনি।


ধরে নেওয়া যেত, এটি একটি নিছক উত্তেজনা. যদি চার বছর পর আবারও না ঘটত। ব্রাহ্মণবাড়িয়াতে রসরাজ দাস নামে একজনের ফেসবুক স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে ২০১৬ সালের ৩০ অক্টোবর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর সদরে এক সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা ঘটে। সে হামলায় হরকলি ঠাকুরপাড়া গ্রামের একজন নিহত হয়েছিলেন এবং আশপাশের আটটি হিন্দুপাড়ায় অন্তত ৩০০ বাড়িঘর, মন্দির ও দেবমূর্তি ভাঙচুর করা হয়েছিল। অনেকেরই ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছিল হামলাকারীরা। এখানেও স্ট্যাটাস দেওয়া অ্যাকাউন্টটা রহস্যে ঘেরা। কারণ, যাঁর বিরুদ্ধে এই স্ট্যাটাস দেওয়ার অভিযোগ, সেই রসরাজ পেশায় একজন জেলে। তিনি ফেসবুক দূরে থাক; কাকে বলে পাসওয়ার্ড, সেটিও তিনি জানেন না। যে পোস্ট ঘিরে এত বড় হামলার ঘটনা, সে বিষয়েও পরে আর কিছু জানা যায়নি। কিন্তু বাস্তবতা হলো, আতঙ্ক বুকে নিয়ে অনেকেই এলাকা ছেড়ে চলে গেছেন।


দুটি ঘটনাও মনে হতে পারত আকস্মিক উত্তজেনাজনিত দুর্ঘটনা। কিন্তু সামনে এলো গঙ্গাচড়া। নাসিরনগরে হামলার ঠিক এক বছরের মাথায় ২০১৭ সালের ১০ নভেম্বর রংপুরের গঙ্গাচড়ায় একই কায়দায় হামলা চালানো হয়। এতে মারা যান একজন।


২০২০ সালে ফ্রান্সে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে সেখানে বসবাসরত বাংলাদেশি একজন ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন। সেই স্ট্যাটাসের দোহাই দিয়ে ২০২০ সালে কুমিল্লার মুরাদনগরে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বাড়িঘর, উপাসনালয়ে হামলা ও ভাঙচুর করা হয়।


করোনার আঘাতে অনেক কিছু থেমে থাকলেও থেমে থাকেনি সাম্প্রদায়িকতা। গত বছরও ঘটেছে কয়েকটি ঘটনা। ২০২১ সালে ঘটেছে সুনামগঞ্জের শাল্লার নোয়াগাঁও গ্রামে হামলার ঘটনা। এর পর ২০২১ সালের ১৬ অক্টোবর ফেসবুকে ধর্মীয় স্থাপনা নিয়ে 'আপত্তিকর' মন্তব্যের জের ধরে রংপুর জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার রামনাথপুর ইউনিয়নের তিনটি হিন্দু অধ্যুষিত গ্রামে সহিংসতার ঘটনা ঘটানো হয়। প্রতি বছর এ ধরনের হামলার পর কত মানুষ এলাকা ছাড়ে, দেশ ছাড়ে, তার কোনো পরিসংখ্যান কোথাও প্রকাশিত হয়নি। এ বিষয়ে কোনো ধরনের গবেষণালব্ধ তথ্যও নেই।


লক্ষণীয়, প্রতিটি হামলার প্রেক্ষাপট একটি ফেসবুক স্ট্যাটাস। কোনো কোনো ক্ষেত্রে যার আইডি পর্যন্ত ভুয়া। আর প্রতিটি হামলার পরপরই এলাকা থেকে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা চলে যায়। কখনও তারা এলাকা ছাড়ে, কখনওবা ছাড়ে দেশ। আবার কখনও খুবই অল্প দামে জমি বিক্রি করতে বাধ্য হয়।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও