বর্ষায় কেন প্রচণ্ড গরম
আষাঢ় মাস শেষ হচ্ছে আজ। পঞ্জিকার পাতায় এখন ভরা বর্ষা। আকাশজুড়ে থাকার কথা ঘন কালো মেঘ। ঝুম বৃষ্টিতে শীতল হওয়ার কথা প্রাণ-প্রকৃতি; কিন্তু ঋতুচক্রের এ নিয়ম ভেঙে সেই আকাশ এখন শরতের মতো শুভ্র। কাশফুলের মতো মেঘের ভেলা ঘুরছে। কিন্তু গরমে টেকা দায়। সূর্য ঢেলে দিচ্ছে তাপদাহ। গত এক সপ্তাহ ধরে প্রকৃতিতে খরতাপ যেন গ্রীষ্ফ্মের কথাই বেশি মনে করিয়ে দিচ্ছে। বাতাসে প্রচুর জলীয় বাষ্প থাকায় আঁচটা খুব বেশি। এমন পরিস্থিতি থাকতে পারে আরও দু-তিন দিন। এরপর বৃষ্টি ঝরিয়ে তাপমাত্রার পারদ কমতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এদিকে গতকাল রাতে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হয়। তবে গরমের তীব্রতা কমেনি।
ঢাকা, টাঙ্গাইল, রংপুর, দিনাজপুর, নীলফামারী জেলাসহ রাজশাহী ও সিলেট বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এই তাপপ্রবাহ দুই থেকে তিন দিন অব্যাহত থাকতে পারে। গতকাল বুধবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল রাজশাহীতে ৩৮ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকায় ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা থাকলেও অনুভূত হয়েছে কয়েক ডিগ্রি বেশি।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ শাহনাজ সুলতানা বলেন, মৌসুমি বায়ু আসে দক্ষিণ দিক থেকে। সেখানে সমুদ্রপৃষ্ঠের ওপরের অংশে তাপমাত্রা বেশি থাকে। এ কারণে ওই দিক থেকে বাতাস এলেও তা গরম থাকে। যার ফলে বাতাসও পাওয়া যায়, আবার গরমও অনুভূত হয়। তা ছাড়া বৃষ্টিও কয়েক দিন ধরে হচ্ছে না। এসব কারণে যত গরম, অনুভূত হচ্ছে তার চেয়ে বেশি।
সহকারী আবহাওয়াবিদ আফরোজা সুলতানা বলেন, মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশে দুর্বলভাবে অবস্থান করছে। সে কারণে বৃষ্টি কম হওয়ায় গরম অনুভূত হচ্ছে। তা ছাড়া বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেশি হওয়ায় গরম বেশি অনুভূত হচ্ছে। তিনি বলেন, তাপপ্রবাহ কাল শনিবার নাগাদ কিছুটা কমে আসতে পারে এবং বৃষ্টির প্রবণতা বাড়তে পারে।
আবহাওয়াবিদ তরিফুল নেওয়াজ কবির বলেন, ১৬-১৭ জুলাই পর্যন্ত পরিস্থিতি এমনই থাকতে পারে। মাঝে মধ্যে কোথাও হালকা বৃষ্টি হলেও গরম খুব একটা কমবে না। গরম কমতে হলে টানা বৃষ্টি হতে হবে। ১৭ বা ১৮ জুলাইয়ের পর বৃষ্টির পরিমাণ কিছুটা বাড়তে পারে বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, এখন যেসব এলাকার ওপর দিয়ে তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে, তা এখনও মাইল্ড অবস্থায়ই আছে। গড়ে ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যেই থাকছে তাপ।
আষাঢ় মাসে এমন গরম পড়ার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে আবহাওয়াবিদ ড. আব্দুল মান্নান বলেন, এখন বর্ষা চলছে। বাতাসে প্রচুর জলীয় বাষ্প আছে। এই জলীয় বাষ্পের কারণে শরীরে প্রচুর ঘাম হয়। তা ছাড়া এখন দিনের ব্যাপ্তি বেশি। দীর্ঘ সময় ধরেই সূর্যের তাপ ভূপৃষ্ঠে পড়ে। এসব কারণে এখন গরম বেশি অনুভূত হচ্ছে।