কয়লা ও এলএনজি আমদানি ক্রমেই দুঃস্বপ্নে পরিণত হচ্ছে
ইউরোপে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে রাশিয়া। কয়লার অস্বাভাবিক ক্রয়চাপ সবক’টি মহাদেশেই। রেকর্ড পর্যায়ের কাছাকাছিতে কয়লা ও এলএনজির স্পট মূল্য। এরই মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার সর্বোত্কৃষ্ট মানের কয়লার দাম টনপ্রতি ৪১০ ডলার ছাড়িয়েছে। রেকর্ড পর্যায় থেকে নেমে এলেও স্পট মার্কেটে এখনো এলএনজি কেনাবেচা হচ্ছে প্রতি এমএমবিটিইউ ৪০ ডলারের কাছাকাছিতে।
একই কয়লার দাম গত বছরের জুলাইয়ে ছিল প্রায় ১৩৯ ডলার। আগের বছরের একই সময়ে তা ছিল প্রতি টন ৪৮ ডলার। সে হিসেবে গত এক বছরে কয়লার দাম বেড়েছে ১৯৪ শতাংশ। দুই বছরে বেড়েছে ৭৫৫ শতাংশ। এর চেয়েও বড় উল্লম্ফন দেখা গিয়েছে এলএনজির মূল্যে। গত এক বছরে জ্বালানি পণ্যটির দাম বেড়েছে ২১২ শতাংশ। ২০২০ সালের জুলাইয়ের পর থেকে মোট বৃদ্ধির হার ১ হাজার ৭০০ শতাংশেরও বেশি।
কভিডের প্রাদুর্ভাবোত্তর বিশ্বে বাড়তি চাহিদার কারণে গত বছরের শুরুর দিকে জ্বালানি পণ্যের দাম বাড়তির দিকে চলে যায়। পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে যায় ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর। রাশিয়ার ওপর একের পর এক বিধিনিষেধ জারি করতে থাকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ (ইইউ) পশ্চিমা ব্লক। ভূরাজনীতির বাইরেও আন্তর্জাতিক পণ্যবাজারের বড় প্রভাবক হয়ে ওঠে ইউরোপে রুশ জ্বালানি সরবরাহ। টানাপড়েনের মধ্যে রুশ জ্বালানির বিকল্প অনুসন্ধানে মরিয়া হয়ে ওঠে ইউরোপীয় দেশগুলো। সর্বশেষ গতকাল রাশিয়া ইউরোপে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দিলে পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়ে ওঠে। রুশ জ্বালানির ওপর নির্ভরতা কমাতে জার্মানি, অস্ট্রিয়া, ইতালিসহ ইউরোপের দেশগুলো এখন আবারো কয়লার দিকে ঝুঁকতে শুরু করেছে। ইউরোপে কয়লার এ আকস্মিক চাহিদা বৃদ্ধি পণ্যটির বাজারমূল্যকে অস্থিতিশীল করে তুলেছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে উন্নয়নশীল দেশগুলো। দেশগুলোর অর্থনীতি বরাবরই জ্বালানি পণ্যের মূল্যের প্রতি সংবেদনশীলতা দেখিয়ে এসেছে। সামষ্টিক অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ায় দেশগুলো এখন জ্বালানি আমদানিতে লাগাম টানতে বাধ্য হচ্ছে। চাহিদামাফিক জ্বালানি আমদানি করতে না পারায় অনেক দেশেই বিদ্যুৎ উৎপাদনে ধস নেমেছে। দিনের বড় একটি সময় ব্ল্যাকআউটে থাকতে হচ্ছে দেশগুলোকে।