‘বীর বাহাদুরদের’ দেশে শিক্ষকের মর্যাদার মৃত্যু

প্রথম আলো আবুল মোমেন প্রকাশিত: ১২ জুলাই ২০২২, ০৮:৩৯

সমাজে বাহাদুরি দেখানোর চল বেশ জাঁকিয়ে বসেছে। মোটরসাইকেল এর একটি মোক্ষম বাহন। যাতায়াতের কার্যকারিতাকে ছাপিয়ে তরুণদের অনেকের কাছেই বাহাদুরির দিকটিই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। আর সেটিই বড় কারণ মোটরসাইকেলের এত দুর্ঘটনা এবং তাতে এত কিশোর–তরুণের মৃত্যুর। ভিয়েতনামের সঙ্গে বাংলাদেশের তুলনা টেনে প্রথম আলোতেই প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, এ দেশে হাজারপ্রতি মোটরসাইকেলের সংখ্যা ভিয়েতনামের তুলনায় অনেক কম হলেও দুর্ঘটনায় মৃত্যুর হার বহুগুণ বেশি।


মুশকিল হলো, এ ধরনের বাহাদুরি নিতান্তই ফাঁপা চাতুরি হলেও সমাজ প্রকৃত চৌকস ছেলে (এবং মেয়ে) ও ফাঁপা বাহাদুরদের মধ্যে পার্থক্য করছে না। আমরা লক্ষ করছি, এই বাহাদুরদের হাতে বিভিন্ন শিক্ষাঙ্গনের দখল চলে গেছে। তাতে প্রাতিষ্ঠানিক শৃঙ্খলা এবং শিক্ষার্থীর দায়িত্ব-কর্তব্য শিকেয় উঠলেও তা নিয়ে উচ্চবাচ্য হতে শোনা যায় না। কারণ, তাঁরা জানেন, ক্ষমতার রাজনীতির আশ্রয়ই হচ্ছে তাঁদের ঢাল। ফলে সেই পরিচয়ে তাঁরা পরিচিত হন এবং কাজ চালান। কাজ মূলত সংগঠনের এবং সেই সুবাদে নিজেদের গোষ্ঠিগত দখল কায়েম রাখা। এটাই দস্তুর হয়ে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশে। বোঝা যায় প্রশাসন তাঁদের সঙ্গে আপস বা রফা করেই চলে। প্রাতিষ্ঠানিক প্রশাসন তো বটেই, নওগাঁর ঘটনায় মনে হচ্ছে, খোদ রাষ্ট্রীয় প্রশাসনও এদের দাপটের কাছে নত, বশীভূত। কোথাও কোথাও সাভারের জিতুর মতো প্রশ্রয়প্রাপ্ত বীরবাহাদুরের সঙ্গে উৎপল কুমার সরকারের মতো নীতিবান মেরুদণ্ডী প্রাণীর দ্বন্দ্ব হলে এই সহিংসতার মুখোমুখি হয়ে সম্মিলিত উদ্যোগ নেওয়ার মতো সাহস বা উদ্যোগের বড়ই অভাব সমাজে। ভীতুর সমাজে জিতুরা জিতবেই। নেহাত শিক্ষক উৎপল কুমার সরকার আহত না হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন বলে জিতু সমস্যায় পড়েছে। সমাজও কিছুটা সাহস সঞ্চয় করে আওয়াজ তুলতে পেরেছে। পুরান ঢাকার বিশ্বজিৎ হত্যা বা বুয়েটের আবরার হত্যার মতো এ ঘটনায়ও জিতুর রেহাই পাওয়ার সম্ভাবনা কম।


কিন্তু অধ্যক্ষ স্বপন কুমারের মর্যাদার যে মৃত্যু হলো! শিক্ষক হৃদয় মণ্ডলের সততা-নিষ্ঠা-দক্ষতার ওপর যে মারণ আঘাত হানা হলো, তার বিচারের কী হলো? বিচার কি হবে? আমাদের মনে সন্দেহ জাগে। কারণ, আপসপ্রবণ সমাজ ও রাজনীতি হৃদয় মণ্ডলকে জেল থেকে মুক্তি দিয়ে, চাকরিতে পুনর্বহাল করে হয়তো একটু সম্মান জানিয়েছে, আর তাতেই হাত ঝেড়ে ফেলেছে। আইন কখন নিজের গতিতে চলে আর কখন থমকে যায়, তার হিসাব কে রাখে! এ ধরনের প্রতিটি ঘটনায় অনেক নেপথ্য আয়োজকের সন্ধান পাওয়া যায়। বোঝাও যায়, কোনো ঘটনাই নিছক উত্তেজনার ফল নয়, সুপরিকল্পিত কাজ। অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসের হেনস্তার সময় শিক্ষকদের চারটির মধ্যে তিনটি মোটরসাইকেল পোড়ানো হয়েছিল। তিনটিই কলেজের তিন হিন্দু শিক্ষকের আর সযত্ন সরিয়ে রাখা যানটি কেবল একজন মুসলিম শিক্ষকেরই নয়, তিনিই সেই ব্যক্তি, ঘটনার যাঁর দিকে মুখ্য কারিগর হিসেবে আঙুল উঠেছে। আওয়ামী লীগ তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করে পরিষ্কার হয়ে যাওয়ার পথ ধরেছে। কিন্তু ঘটনাগুলোর পর ঘটনায় এ রকম ময়লা এত লাগছে, যে ঝাড়লেই তা যাবে না। ফলে পুরো ন্যক্করজনক ঘটনাগুলোর যাঁরা আয়োজক, তাঁদের বিচারের অপেক্ষা যেন দীর্ঘায়িত না হয়।

সম্পূর্ণ আর্টিকেলটি পড়ুন

প্রতিদিন ৩৫০০+ সংবাদ পড়ুন প্রিয়-তে

আরও