জাহাজ মেরামতে নতুন নজির
৬৮ দিন পর সচল হয়ে চট্টগ্রাম বন্দর ছাড়ল বিদেশি কনটেইনার জাহাজ হাইয়ান সিটি। জাহাজটিতে বাংলাদেশি রপ্তানিকারকদের ৮০০ কোটি টাকার পণ্য বোঝাই ছিল। গত ১৪ এপ্রিল চট্টগ্রাম বন্দর জেটি ছেড়ে সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে রওনা দিয়ে কুতুবদিয়া সাগর পর্যন্ত পৌঁছলে মাঝপথে বাংলাদেশি জাহাজ ওরিয়ন এক্সপ্রেসের সঙ্গে ধাক্কা লাগলে হাইয়ান সিটি জাহাজের এক পাশে ফুটো হয়ে কাত হয়ে যায়। এ অবস্থায় মাঝসাগরে জাহাজটিতে পানি ঢুকে অচলাবস্থা তৈরি হয় এবং যাত্রা বন্ধ হয়ে যায়।
সাগরে জাহাজটিকে রাখতে গেলে ডুবে যাওয়ার আশঙ্কা ছিল, আবার মাঝসাগরে কনটেইনার নামিয়ে জাহাজটির মেরামতও করা যাচ্ছিল না। এই জটিলতার মধ্যে সাগরে ২০ দিন অতিবাহিত হওয়ার পর চ্যালেঞ্জ নিয়ে এগিয়ে আসে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহানের প্রত্যক্ষ তদারকিতে বিশেষ নিরাপত্তাব্যবস্থায় জাহাজটিকে টেনে কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পারে জাহাজ মেরামতের কর্ণফুলী ড্রাইডক জেটিতে নেওয়া হয়। সেখানে জাহাজ থেকে সব কনটেইনার নামিয়ে বিশেষ কৌশলে জাহাজটির মেরামত শেষে গত ২১ জুন জাহাজটি আবার সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে রওনা দেয়। আগামী ২৯ জুন জাহাজটি সিঙ্গাপুর বন্দরে পৌঁছবে।
জাহাজটির মেরামত সঠিকভাবে সম্পন্ন করে সচল করা বাংলাদেশের মেরিনারদের জন্য অনেক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ ও চ্যালেঞ্জিং ছিল। প্রথমত, এত বড় আকারের জাহাজ মেরামতের নজির চট্টগ্রাম নয়, বাংলাদেশেই নেই। দ্বিতীয়ত, এত বড় জাহাজ বন্দর চ্যানেল দিয়ে প্রবেশেরও রেকর্ড নেই। আর জাহাজটিতে ৮০০ কোটি টাকার রপ্তানি পণ্যভর্তি কনটেইনার থাকার ফলে সেই জাহাজটিকে সুচারুরূপে মেরামত করাও ছিল তৃতীয় চ্যালেঞ্জ।
কিন্তু দক্ষতার সঙ্গে জাহাজটি মেরামত সম্পন্ন করে প্রান্তিক বেঙ্গল স্যালভেজ অ্যান্ড ডাইভিং। এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক মেরিন প্রকৌশলী গোলাম সারোয়ার কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘জাহাজটি সচল করতে আমাদের বিভিন্নমুখী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয়েছে। সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল জাহাজটির বড় ফুটো মেরামত করা এবং সেটির গভীরতা রেকর্ড পরিমাণ বেড়ে যাওয়া। জাহাজের গভীরতা ছিল সাড়ে সাত মিটার; কিন্তু ফুটো দিয়ে পানি প্রবেশের কারণে গভীরতা বেড়ে ১১ মিটারে উন্নীত হয়। ফলে খুব জটিল হয়ে যায়। ’