সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, স্বাগত সাতাশি
১৯৭৪ সালে সদ্য স্কুল পাস তরুণ হিসেবে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর সদ্য প্রকাশিত ‘অনতিক্রান্ত বৃত্ত’ দিয়ে আমার ‘সিইচৌ’ পাঠ শুরু। আটচল্লিশ বছর পরও দেখছি এবং তার লেখাতেও পড়ছি বৃত্তটি অনতিক্রান্তই রয়ে গেল।
দরবারে ভাঁড় ও বুদ্ধিজীবীর আকাল হতে কখনো দেখা যায় না। তারা বর্জ্য ও হালুয়ার তফাৎ করেন না, বর্জ্য ভক্ষণ করেও হালুয়ার ঢেকুর তোলেন; দলদাসরাই যখন পাল্লায় সওয়ার, নিতান্ত সংখ্যালঘু হাতে গোনা ক’জন যতটা সম্ভব ভারসাম্য রক্ষা করার চেষ্টা করেন, আঁধারকে আঁধার এবং কোদালকে কোদালই বলেন। সংখ্যালঘুদের একজন সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। ২৩ জুন ২০২২ তিনি সাতাশি ছুঁতে যাচ্ছেন। ১৯৭১-পরবর্তী স্বাধীন বাংলাদেশ কেমন? গণতন্ত্রের চেহারাটা কেমন? ২০২১ সালে ডেইলি স্টার বাংলাকে দেওয়া তার সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন: ‘শাসক শ্রেণি জনগণের সম্মতি নিয়ে দেশ শাসন করে না। কখনো কখনো তারা জোর-জবরদস্তির ভেতর দিয়ে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করে নেয়। যখন ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসে তখনো জনগণের স্বার্থ দেখবে এমন লোকেরা জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয় না; ভোটে জেতে তারাই যাদের টাকা আছে। টাকাওয়ালারা নির্বাচনে টাকা খরচ করে, জেতে এবং জিতে আরও বেশি ধনী হয়। তা ছাড়া এমন ঘটনাও তো ঘটে যে, ভোটার আসে না, ভোট দেয় না, তবু কথিত জনপ্রতিনিধিরা নির্বাচিত হয়ে যান এবং দেশ শাসন করেন। বুদ্ধিজীবীরা কথা বলেন ঠিকই, বলতে হয়, নইলে তারা বুদ্ধিজীবী কেন; কিন্তু তাদের অধিকাংশই কথা বলেন লাইন ধরে। একদল থাকেন সরকারের পক্ষে, কথা বলেন ইনিয়েবিনিয়ে, সরকারের মুখ চেয়ে। এরা হয়তো ইতোমধ্যেই সুবিধা পেয়েছেন, নয়তো পাবেন বলে আশা করছেন। সরকারের বিরুদ্ধে যারা বলেন তারাও আশাবাদী; আশা রাখেন যে এখন পাচ্ছেন না ঠিকই, কিন্তু আগামীতে সুদিন আসবে এবং তখন সুবিধা পাবেন। তবে তাদের কথায় তেমন জোর থাকে না। প্রথমত, গণমাধ্যম তাদের তেমন একটা পাত্তা দেয় না, কেননা গণমাধ্যমের মালিকরা সরকারের বিরুদ্ধে যেতে চায় না, ভয় পায়। দ্বিতীয়ত, সরকার নিজের বিরুদ্ধ মত পছন্দ করে না।’