উদ্বোধন হোক সেতুর উদ্বোধন হোক ঐক্যের
আমার সৌভাগ্য হয়েছে দুনিয়ার বহু দেশে বড় বড় সেতুর ওপর দিয়ে ভ্রমণ করার। সেগুলোর কোনো কোনোটি দৈর্ঘ্য-প্রস্থে ইতিহাস, কোনোটি তার আকৃতি আর অবয়বে। ভিয়েতনামের ছোট এক শহরে আমাদের গাইড একটি ছোট সেতু দেখিয়ে বারবার বলছিলেন, রাতে যেন এখানে এসে একবার ঘুরে যাই। পাশেই হোটেল। ডিনারের সময় সন্ধ্যায় রাস্তায় নেমেই বুঝলাম কেন তিনি তা বলেছিলেন। সেতুটি দেখতে একটি ড্রাগনের মতো। যত রাত বাড়ে, তত তার মুখ দিয়ে ধোঁয়ার উদ্গিরণ দেখার মতো।
আসামের বরাক নদীর ওপর যে সেতু, সেটিও কম কিছু না। আপনি যদি আমেরিকা বা ইউরোপের নানা দেশে গিয়ে থাকেন, সেখানেও নয়নলোভা অনেক সেতু দেখবেন। কিন্তু আমাদের পদ্মা সেতু বাঙালির মনে যে আবেগ আর ভালোবাসা তৈরি করেছে, তা পৃথিবীতে বিরল। এর কারণ দুটি। এক. আমরা যে নিজেরা কিছু করতে পারি বা আমাদের যে সামর্থ্য আছে, তা প্রায়ই ভুলে যাই আমরা। রাজনীতি বড় কাজ বা আগ্রহ ভুলিয়ে দিয়েছে অনেক কাল আগেই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যখন সব বাধা উজিয়ে, সব বিপত্তি ঠেলে এ কাজটি করলেন, তখন আমরা উদ্বেলিত হবই। তা ছাড়া, আমাজনের পর এমন খরস্রোতা নদীর বুকে সেতু মানেই তো সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের সেই কবিতার পঙ্ক্তি, ‘মানুষেরা কী কাণ্ডই না করছে সেখানে...’।
মানুষের এই বড় কাণ্ড বা কাজ বিতর্কিত করতে পারে একমাত্র বাঙালি জাতি এবং তা হয়েছে। কিন্তু যেকোনো বাধাই মূলত একটি কাজকে আরও অগ্রসর করে দেয়। মনে করিয়ে দেয় এই বাধা ঠেলেই সামনে যেতে হবে। দূরদর্শী নেতা আর প্রজ্ঞা থাকার মতো নেতৃত্ব থাকলেই তা সম্ভব। প্রশ্ন হচ্ছে যখন তা হয়েছে, তখন কেন এ বিষয়ে আমাদের উদারতা সীমাবদ্ধ হবে?