বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা তুলনা নিয়ে অর্থহীন বাহাস কেন
চরম দুর্দশায় পড়েছে শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি। বৈদেশিক ঋণের কিস্তি দিতে না পারায় ঋণখেলাপিতে পরিণত হয়েছে দেশটি। শুধু তা-ই নয়, জনগণের ভোগের জন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি আমদানি করার অর্থও নেই তাদের। অর্থনৈতিক সংকট এখন রাজনৈতিক সংকটেও রূপ নিয়েছে। এসব নিয়ে প্রচুর আলোচনা-লেখালেখি হয়েছে। তার বিস্তারিত উল্লেখ এখানে নিষ্প্রয়োজন।
একটা সময় ছিল, যখন এশিয়ায় অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে শ্রীলঙ্কা ছিল রোল মডেল। তামিলদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণের কারণে সৃষ্ট গৃহযুদ্ধ শ্রীলঙ্কাকে পিছিয়ে দেয় অনেক। ২৬ বছরব্যাপী এই গৃহযুদ্ধ শেষ হয় ২০০৯ সালে নির্মম সামরিক অভিযান ও যুদ্ধাপরাধের অভিযোগের মধ্য দিয়ে। এরপর ঘুরে দাঁড়াচ্ছিল দেশটি। কিন্তু সরকারের নেওয়া বিভিন্ন ভুল সিদ্ধান্তের কারণে আবার নতুন সংকটে পড়েছে শ্রীলঙ্কা।
মোটা দাগে তিন-চারটি কারণে শ্রীলঙ্কার আজকের এ অবস্থা। প্রথমত, ব্যাপক কর হ্রাসের কারণে সরকারের রাজস্ব কমে যায়, আর সেই ঘাটতি পূরণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিপুল পরিমাণ টাকা ছাপায়, যাতে মূল্যস্ফীতি বেড়ে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যায়। অন্যদিকে ডলারের সরকারি মূল্য বেঁধে রাখার কারণে অভিবাসী শ্রমিকেরা রেমিট্যান্স পাঠাতে থাকেন হুন্ডির মাধ্যমে। ডলারের বাজারদর সরকারি দরের চেয়ে ২৫ শতাংশ বেশি। ফলে রেমিট্যান্সে ধস নামে। পাশাপাশি পূর্বপ্রস্তুতি ছাড়া হঠাৎ অর্গানিক চাষাবাদে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। রাসায়নিক সার ব্যবহার বন্ধের ফলে একদিকে কৃষি উৎপাদন ব্যাপক হ্রাস পেয়ে খাদ্যপণ্যে মূল্যস্ফীতি ঘটে, অন্যদিকে শ্রীলঙ্কার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রপ্তানি পণ্য চায়ের উৎপাদন ও রপ্তানি কমে গিয়ে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বিপজ্জনক পর্যায়ে নেমে আসে। পর্যটন শ্রীলঙ্কার অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত। ২০১৯ সালের ইস্টার বোমা হামলা পর্যটক আগমন কমিয়ে দেয়। ২০২০ থেকে শুরু হওয়া কোভিড মহামারির কারণে খাতটি আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি সমস্যা বাড়িয়েছে আরও।
এসবের কোনোটিই বাংলাদেশের সঙ্গে তেমন মেলে না। মূল্যস্ফীতি আছে, তবে তা শ্রীলঙ্কার পর্যায়ে পৌঁছায়নি। রেমিট্যান্স-প্রবাহ এখন পর্যন্ত মোটামুটি ঠিক আছে। কৃষি ও রপ্তানি খাত ভালো করছে। পর্যটন তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয় বাংলাদেশের অর্থনীতিতে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এখনো আছে স্বস্তিদায়ক পর্যায়েই। তাহলে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা তুলনা নিয়ে মাঠ গরম করা কেন?